ফটিকছড়ির ভুজপুরে ১২ বছরের এক শিশুকে নিপীড়নের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় ১১ বছর পর আদালত আব্দুল জলিল নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সাথে ভিকটিমের পরিবারকে একলক্ষ টাকা প্রদান করতে আসামিকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। গতকাল দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৭ এর বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ এই রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল জলিল ভুজপুর থানার চাইলদাতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। মামলায় রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু ট্রাইব্যুন্যাল–৭ এর বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম।
অ্যাডভোকেট আরিফুল আলম গতকাল আজাদীকে বলেন, ২০০৯ সালে ২২ সেপ্টেম্বর ভুজপুরে ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে নিপীড়নের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘাতক। পরে শিশুটির লাশ একটি টিলার নিচে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় জড়িত আসামি আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত), ২০০৩ এর ৯(২) ধারায় অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়েরের পর আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মামলার বাদী ছিলেন শিশুটির বাবা মোহাম্মদ হাবিল মিয়া। ওই মামলায় দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে গতকাল বুধবার নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল–৭ এর বিচারক আসামি আব্দুল জলিলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। একই সাথে তাকে এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। এই টাকা ভিকটিমের পরিবারকে প্রদান করতে বলা হয় আদালতের রায়ে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের চাঞ্চল্যকর ঘটনাটিতে ওই বছরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। পরে আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় মোট ১৩/১৪ জন স্বাক্ষীর মধ্যে আদালতে ৯ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। গতকাল মামলার রায়ের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর পাশাপাশি আসামি পক্ষে আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বিবরণীতে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ২১ সেপ্টেম্বর শিশুটি একই গ্রামে অবস্থিত তার চাচার বাড়িতে বেড়াতে যায়। ওইদিন রাত্রি যাপন শেষে পরদিন সকালে সে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। এ সময় পথিমধ্যে আসামি আব্দুল জলিল তাকে ধরে নিয়ে একটি টিলার নিচে নিয়ে যায়। সেখানে শিশুটিকে ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশটি সেখানে ফেলে রাখা হয়। পরে পরিবারের লোকজন মেয়েটিকে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে আসামি জলিলের বাড়ির পাশে একটি টিলার গভীর খাদে একটি কুকুরের আসাকে অনুসরণ করে মেয়েটির রক্তাক্ত লাশ পায় পরিবার। এ সময় আসামি আব্দুল জলিল তার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন।
২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ভুজপুর থানায় আব্দুল জলিলকে একমাত্র আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই সময় তার বয়স ছিল ৩৮ বছর।