কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু মোকাবিলা, উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ চারটি খাতে দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশনের অনুকূলে ৮০ কোটি ৫ লাখ টাকা ছাড় করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) চেয়ে কম টাকা পেয়েছে চট্টগ্রাম। অবশ্য ঢাকার চেয়ে কম পেলেও দেশের বাকি নয়টি সিটি কর্পোরেশনের চেয়ে বেশি পেয়েছে বন্দর নগরী।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ছাড়কৃত অর্থের বিপরীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পেয়েছে ১১ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ ঢাকা উত্তর ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পেয়েছে ১৪ কোটি ৪১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ঢাকা উত্তরের চেয়ে ৫ কোটি ১৫ হাজার টাকা এবং দক্ষিণের চেয়ে ২ কোটি ৭৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা কম পেয়েছে চসিক।
ডেঙ্গু মোকবিলা ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন সহায়তা খাতের ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার উপ-খাত থেকে এককালীন ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা ছাড় করা হয় গত মঙ্গলবার। এতে চসিক পেয়েছে মাত্র ৫০ লাখ টাকা। বিপরীতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন পেয়েছে ৭০ লাখ টাকা করে। এছাড়া গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লাহ, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ পেয়েছে ৩৭ লাখ টাকা করে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব নুমেরী জামান জানান, ছাড়কৃত অর্থ নির্ধারিত কার্যক্রম ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা যাবে না। মন্ত্রণালয়ের প্রতিস্বাক্ষরিত কিল উপস্থাপনের মাধ্যমে মেয়র অথবা প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরিকৃত অর্থের আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
কোভিড-১৯ মোকবিলা : গত মঙ্গলবার কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর জন্য ছাড় করা হয় ১০ কোটি টাকা। এতে চসিক পেয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিপরীতে ঢাকার দুই উত্তর সিটি কর্পোরেশন পেয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা করে। এছাড়া গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ ও কুমিল্লা ৮০ লাখ টাকা করে এবং খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন পেয়েছে ৬০ লাখ টাকা করে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব নুমেরী জামান স্বাক্ষরে একই বিভাগের চিফ একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসারকে দেয়া এক পত্র সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনসমূহ অধিক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী (মাস্ক, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার) বিতরণ করা হবে ছাড়কৃত অর্থ দিয়ে।
উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন : দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে গত মঙ্গলবার ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড় করা হয়। এতে চসিক পেয়েছে ৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অথচ ঢাকা উত্তর ১৪ কোটি ১০ লাখ ২৫ হাজার এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা পেয়েছে। এছাড়া খুলনা ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, রাজশাহী ৩ কোটি টাকা, বরিশাল ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, সিলেট ৯৩ লাখ টাকা, কুমিল্লাহ ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, নারায়ণগঞ্জ ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, রংপুর ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা, গাজীপুর ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন পেয়েছে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব নুমেরী জামান জানান, চলতি অর্থ বছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে সিটি কর্পোরেশনসমূহের আয়তন, জনসংখ্যা ও গত অর্থ বছরের রাজস্ব আয় বিবেচনায় অনুমোদিত বিভাজন অনুযায়ী সাধারণ বরাদ্দ উপ-খাত থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তিতে এককালীন অর্থ অবমুক্তিতে সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন করেছি।
আবর্তক অনুদান : গত ২৮ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুন্নয়ন বাজেটে সিটি কর্পোরেশনসমূহের অনুকূলে আর্বতক অনুদান (অন্যান্য অনুদান) খাতে তৃতীয় কিস্তি বাবদ ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ছাড় করা হয়। এতে চসিক পেয়েছে মাত্র সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। অথচ ডাকার দুই সিটি কর্পোরেশন পেয়েছে ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে। বাকি ৯টি সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি পেয়েছে ২৫ লাখ টাকা করে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব নুমেরী জামান জানান, পরবর্তী কিস্তির অর্থ ছাড়ের পূর্বে ছাড়কৃত অর্থ ব্যয় বিবরণী অবশ্যই প্রেরণ করবে সিটি কর্পোরেশনগুলো। অব্যয়িত অর্থ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করতে হবে।