জাতীয় পরিচয়পত্রের ‘বিক্রির’ অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহকে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর উত্তর কাজীপাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ বিভাগের উপ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। খবর বিডিনিউজের।
১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ‘২০ হাজার কোটি টাকায়’ বিক্রি করে ‘অবৈধভাবে আত্মসাতের’ অভিযোগে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার কাফরুল থানায় এ মামলা হয়েছে; যাতে আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ ১৯ জনকে। এ মামলার হওয়ার পরদিন গতকাল সকালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সাবেক পরিচালক (ডেটা সেন্টার) তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে তাকে গ্রেপ্তার ও মামলার বিষয়ে কথা বলেন পুলিশ কর্মকর্তা তালেবুর। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ’অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে’ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের অভিযোগে করা মামলায় ‘২০ হাজার কোটি টাকার ই–ট্রানজেকশনের’ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তথ্য ‘বিক্রির’ অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করেন এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে’ ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার অনুমতি দেন আসামিরা। সেসব তথ্য দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘বিক্রি’ করা হয়। তথ্য বিক্রির প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ’ করা হয়েছে। তৃতীয়পক্ষের কাছে তথ্য পাচার হওয়ায় জনগণের মধ্যে ‘নিরাপত্তাহীনতা’ দেখা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ডিসি তালেবুর বলেন, নির্বাচন কমিশনের ডেটা সেন্টারে সংরক্ষিত ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ৪৬ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্যের মিরর কপি তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে তা দেশি–বিদেশি ও সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করার অভিযোগে তারেক এম বরকতউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর এনআইডি যাচাই সেবা গ্রহণ বিষয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিসির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়। ওই চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ অনুসারে, বিসিসি নির্বাচন কমিশনের তথ্য–উপাত্ত কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিনিময় বা বিক্রি করতে পরবে না। তালেবুর বলেন, তবে এই চুক্তির তিন বছর আগেই ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের মিরর কপি ২০১৯ সালের এপ্রিলে বিসিসিকে দেওয়া হয়। বিসিসি মিরর কপিটি ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিস লিমিটেডকে বাণিজ্যিক উদ্দেশে ব্যবহারের জন্য দেয়। ডিজিকন এসব তথ্য পরিচয় নামে ওয়েবসাইটের (ঢ়ড়ৎরপযড়ু.মড়া.নফ) মাধ্যমে ১৮০টিরও বেশি দেশি–বিদেশি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সংরক্ষিত ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংম্বলিত ডেটা সেন্টারটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে প্রজ্ঞাপন দ্বারা স্বীকৃত। গ্রেপ্তার ব্যক্তিসহ আসামিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে ডেটাবেজের অনুলিপি সংগ্রহ করে স্থানান্তর করে এবং ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক প্রতারণা করে। এছাড়া তারা ব্যক্তির আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিত ব্যক্তিগত নাগরিক তথ্যাদি অবৈধভাবে সংগ্রহ ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ডিজিকনের মালিক শরীফ ওয়াহেদও এ মামলার আসামি।
সজীব ওয়াজেদ জয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য–প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বেও ছিলেন। পরিবার নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। আর সরকার পতনের পর গত ৫ অগাস্ট পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সরকার পতনের নয় দিনের মাথায় দেশ ছাড়ার চেষ্টার সময় বিমানবন্দর থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলককে আটকের তথ্য দেয় পুলিশ। কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।