মামলা জটে আটকা থাকা চট্টগ্রাম কাস্টমসের অন্তত দশ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব উদ্ধারের কার্যকর পদক্ষেপ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালে এসব রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হলেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না। দুই হাজারেরও বেশি মামলায় সরকারের এই বিপুল সংখ্যক রাজস্ব আটকা পড়ে আছে।
নানা ছলছুতায় কাস্টমসের বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়া আমদানিকারকেরা বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শুল্ক পরিশোধ না করার কারসাজি করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালে এই ধরনের চাপের প্রবণতা না থাকায় মামলাগুলোর ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন বলে সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দর দিয়ে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্তত ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়। আমদানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। দেশের সবচেয়ে বড় এই সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির শুল্কায়নসহ যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ থাকে চট্টগ্রাম কাস্টমসের হাতে। দেশের হাজার হাজার আমদানিকারক বিশ্বের নানা দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করেন। যা চট্টগ্রাম কাস্টমসে শুল্ক পরিশোধ করে বন্দর থেকে খালাস করে নেন। আমদানি প্রক্রিয়ায় শুল্ক পরিশোধ করা নিয়ে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নেন বহু আমদানিকারক। প্রভাবশালী আমদানিকারকদের অনেকেই শুল্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। এই ধরনের অন্তত দুই হাজারের বেশি মামলা রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিরুদ্ধে। যেখানে সরকারের দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আটকে আছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
আমদানিকারকেরা মামলা ঠুকে দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পণ্য খালাস করে নিয়ে যান। একটি ব্যাংক গ্যারান্টি দেন। অনেক সময় এই ব্যাংক গ্যারান্টি শুধুমাত্র একটি কাগুজে প্রমাণ হয়ে থাকে। বছরের পর বছর ধরে মামলা চলে। ব্যবসায়ীরা শুল্ক পরিশোধ না করে মামলার দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে থাকেন।
অনেক আমদানিকারক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাস্টমসের শুল্ক পরিশোধের ব্যাপারটি ঝুলিয়ে রাখেন, সময়ক্ষেপণ করেন। বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা এই ধরনের বহু ঘটনা রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কারণে সেইসব আমদানিকারক কিংবা ব্যবসায়ী শিল্পপতিকে কাস্টমস কিছুই করতে পারেনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলছে গত প্রায় এক বছর ধরে। এই সুযোগে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের কাছে আটকে থাকা রাজস্ব উদ্ধারে কাস্টমস একটি বড় ধরণের উদ্যোগ নিতে পারে বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় নেই। রাজনৈতিক নেতারা চাইলেও এখন আর তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মামলা জটে আটকে থাকা কোটি কোটি টাকার শুল্ক আদায় করার সুযোগ রয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা মামলা ঝুলিয়ে রেখে সুযোগ নেন। তারা বিষয়গুলোর মীমাংসা চান না। চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) শাখায় তারা আসেন না। এতে করে মামলার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। বাড়ছে আটকে থাকা শুল্কের পরিমাণও।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ–কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের কাস্টমসের রাজস্ব সংক্রান্ত অনেক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আসলে বিচারাধীন মামলা নিয়ে আমাদের কাস্টমসের পক্ষ থেকে তেমন কিছু করার নাই। আমরা এনবিআরে প্রতিনিয়ত মামলার বিষয়ে অবহিত করছি। এনবিআরের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে কথা বলে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।