ছয় লেনের টোলভিত্তিক অ্যাকসেস কন্ট্রোল হাইওয়ে এবং দুই পাশে সার্ভিস রোডসহ চট্টগ্রাম–ঢাকা মহাসড়ককে ১০ লেনে উন্নীত করতে অর্থের উৎস খুঁজছে সরকার। প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বিদেশি বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ এবং আলোচনা চলছে। তবে কারা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে এডিবি, বিশ্ব ব্যাংক, এআইআইবি, জাইকাসহ বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ চলছে। ইতোমধ্যে এডিবির সহায়তায় এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
সূত্রে জানা যায়, দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইনখ্যাত চট্টগ্রাম–ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি পণ্য পরিবাহিত হয়। লাখ লাখ মানুষের প্রতিদিনকার যানবাহন ছাড়াও বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহনে এই রাস্তার উপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। ২০১৬ সালে মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করা হয়। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বিপুল পরিমাণ যানবাহনের চাপ সামলাতে সড়কটির হিমশিম অবস্থা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের জরিপে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র যানজটের কারণে এই সড়কে প্রতিদিন ৮৫ কোটি টাকার শ্রমঘণ্টা ও জ্বালানি অপচয় হচ্ছে। ২০১৯ সালে এই মহাসড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন চলাচল করত প্রায় ৩৫ হাজার গাড়ি। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজারে। মাত্র ৫ বছর পর এই সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ হাজারে উন্নীত হবে বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।
যানবাহনের এই বিপুল চাপ সামলানোর জন্য ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রসারণের ব্যাপারটি সামনে আসে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রকল্পটির দায়িত্ব দেয়া হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগকে। পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের ডান দিকে প্রায় ৯০ শতাংশ জমির মালিক সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে আরো কিছু জমি অধিগ্রহণ এবং আধুনিক সুযোগ–সুবিধা সন্নিবেশের কারণে প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা।
২০১৬ সালে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা। কিন্তু এখন ব্যয় ধরা হয়েছে অন্তত ১৬ গুণ বেশি। জমি উন্নয়ন, উড়াল ইন্টারচেঞ্জ, মাল্টিলেভেল ক্রসিং, ইলেকট্রনিক টোল সিস্টেম, উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা, সড়কের নিরাপত্তা, পণ্যবাহী গাড়ির জন্য স্টেশন এবং জরুরি লেন নির্মাণ প্রকল্পটির খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সওজের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১০ লেনের প্রকল্পটিতে ছয় লেনের অ্যাকসেস কন্ট্রোল হাইওয়ে থাকবে। পাশাপাশি দুই পাশে দুই লেনের সার্ভিস রোড নির্মাণ করা হবে। হাইওয়েতে প্রবেশ করতে হলে টোল পরিশোধ করতে হবে। এর উভয় পাশের দুই লেন করে ৪ লেনে সব ধরনের যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে। এছাড়া মহাসড়কে ছয়টি মাল্টিলেভেল উড়াল ক্রসিং এবং ২০টির বেশি ফ্লাইওভার ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাখা হবে তিন মিটার প্রশস্ত জরুরি লেন এবং আধুনিক মাল্টিলেয়ার ইন্টারচেঞ্জ ও আধুনিক মনিটরিং ব্যবস্থা। কাচপুর, সাইনবোর্ড, মেঘনা ও ভৈরব সেতু এলাকার যানজট নিরসনে দ্রুতগতির করিডর তৈরি করা হবে। এডিবির সহায়তায় পরিচালিত ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। এখন অর্থের সংস্থান হলেই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে সরকার এখন বিভিন্ন বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ ও আলোচনা করছে। তবে কারা প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করবে তা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, প্রকল্পটি শুধু একটি মহাসড়কই হবে না, এটা বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতির চেহারাও পাল্টে যাবে। এই মহাসড়ক দেশের জিডিপি ১ থেকে ১.৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করবে। চট্টগ্রাম বন্দর, বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, মীরসরাই শিল্পাঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই মহাসড়ক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।











