১০ বছর ৯ মাস পর পলোগ্রাউন্ডে কাল বিএনপির গণসমাবেশ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১১ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ ১০ বছর ৯ মাস পর নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে গণসমাবেশ করবে বিএনপি। জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় এ গণসমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে সমাবেশকে ঘিরে দুটো লক্ষ্য ঠিক করেছে বিএনপি। প্রথমত, গণসমাবেশে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, হরতাল-অবরোধ থেকে সরে এসে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের নতুন কৌশল নির্ধারণ।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের পর পর্যায়ক্রমে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে শিডিউলও ঘোষণা করা হয়েছে। সমাবেশগুলোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইতোমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে চাই। প্রচণ্ড গণ-আন্দোলন সৃষ্টি করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই।
এদিকে বিভাগীয় আয়োজন হলেও গণসমাবেশ সফল করা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপির চট্টগ্রামের তিনটি সাংগঠনিক জেলা। অর্থাৎ মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম। তিন সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, পলোগ্রাউন্ড মাঠে লক্ষাধিক মানুষের জায়গা হয়। আশেপাশের জেলা থেকে এত সংখ্যক লোক আসা সম্ভব না। আবার মাঠ পূর্ণ না হলে প্রশ্ন উঠবে বিএনপির জনপ্রিয়তা নিয়ে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগর এবং আশেপাশের জেলা থেকেই লোকসমাগম বাড়াতে হবে।
অবশ্য উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং সমাবেশ সফল করতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিটি থানায় প্রস্তুতি সভা করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। গতকালও এলাকায় এলাকায় লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল সমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে পলোগ্রাউন্ড মাঠ পরিদর্শনে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় তিনি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশ ঐতিহাসিক সমাবেশ হিসেবে রূপ নিবে। এই সমাবেশ থেকে সরকারের দুর্নীতির ও দু:শাসনের ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন কোনো একদলীয় সরকারের অধীনে জনগণ মেনে নেবে না। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং সমপ্রতি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে পাঁচ নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
আমীর খসরুর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-গ্রাম বিষয়ক সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ।
এদিকে প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে গণসমাবেশ উপলক্ষে গঠিত কমিটির দলনেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দৈনিক আজাদীকে বলেন, একসময় বিরোধী দলের আন্দোলনের কৌশল ছিল হরতাল-অবরোধ এবং জ্বালাও-পোড়াও। এখন রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। নৈরাজ্য না করেও জনশক্তিও যে ফ্যাসিবাদ সরকারের ভীত কাঁপিয়ে দিতে পারে তার নজির স্থাপন করবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় গণসমাবেশ। গণসমাবেশে যারা আসবেন তাদের মধ্যে কমিটমেন্ট থাকবে সরকারকে বিদায় দিতে হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১০ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে চট্টগ্রামসহ আট জেলায় অনুষ্ঠিত প্রস্ততি সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। সবখানেই গণসমাবেশকে ঘিরে উৎসাহ লক্ষ্য করেছি। তাদের চোখে-মুখের অভিব্যক্তিটা এমন, তারা গণসমাবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের সাহসিকতা, প্রত্যয় ও কমিটমেন্ট দেখে বলতে পারি জনস্রোতে পরিণত হবে সমাবেশ।
গণসমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম দৈনিক আজাদীকে বলেন, জনসমুদ্রে পরিণত হবে গণসমাবেশস্থল। বিভাগের প্রতিটি জেলা থেকে নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ লোকজন অংশ নিবে।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাগাদাত হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, পলোগ্রাউন্ড মাঠ এবং আশেপাশে পাঁচ-ছয় লাখ লোকের জায়গা হবে। পুরো মাঠ পূর্ণ করায় আমাদের টার্গেট। নগরের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের প্রতিটি থেকে ২০ হাজার করে লোক অংশ নিবে। বিভাগীয় জেলাগুলো থেকেও কয়েকশ গাড়িতে করে নেতাকর্মীরা আসবেন। সাধারণ মানুষও অংশ নিবেন।
প্রসঙ্গত, পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে এ মাঠে সমাবেশ করতে চাইলেও প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় করতে পারেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাবুলসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে পিবিআইয়ের চার্জশিট গ্রহণ
পরবর্তী নিবন্ধঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল নিয়ে ভিন্ন নিয়ম থাকা উচিত নয় : বাণিজ্যমন্ত্রী