বাঁশখালীর লটমণি পাহাড় থেকে ১০ বছর আগে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে র্যাবের করা মামলায় বিএনপি নেত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ ২৫ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবু হান্নান এ আদেশ দেন। শাকিলা ফারজানা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এবং প্রয়াত বিএনপি নেতা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদকও শাকিলা ফারজানা।
ট্রাইব্যুনালের পিপি আবদুস সাত্তার সরোয়ার দৈনিক আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এ মামলায় মাত্র ১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের খালাস দিয়েছেন।
আদালতসূত্র জানায়, এ মামলার মোট আসামি ২৮ জন। এর মধ্যে দুজন উচ্চ আদালত থেকে আগেই অব্যাহতি পেয়েছেন। একজন আসামি মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকী ২৫ জন আসামি আজকে (গতকাল) খালাস পেয়েছেন। ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, শাকিলা ফারজানার বিরুদ্ধে বাঁশখালীর পাশাপাশি হাটহাজারী থানাতেও একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। ওই মামলা থেকেও গত মাসে তিনি খালাস পেয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর মাদ্রাসাতুল আবু বকর (র.)-এ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন র্যাব–৭–এর সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। এর দুদিন পর বাঁশখালীর লটমণি পাহাড় থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ঘটনাতেও র্যাবের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের হয়। র্যাব–৭ এর তৎকালিন সহকারী পরিচালক এম জি রব্বানী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। র্যাবের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, লটমণি পাহাড় থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তিনটি একে–২২ রাইফেল, একটি রিভলবার, ছয়টি পিস্তল ও দেশে তৈরি তিনটি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ৭৫১ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলি, ছয়টি একে–২২ রাইফেলের, নয়টি পিস্তলের ম্যাগজিন, তিনটি চাপাতি, দুইটি ওয়াকিটকি ও ২৩ সেট প্রশিক্ষণ পোশাক উদ্ধার করা হয়। র্যাবের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছিল যে, লটমণি পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ হতো। আরো বলা হয়, হাটহাজারী ও লটমণি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া জঙ্গিরা চট্টগ্রামভিত্তিক নতুন জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সদস্য।
আদালতসূত্র আরো জানায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ বাশঁখালী ও ৩ এপ্রিল হাটহাজারী থানার মামলায় ৬১টি জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে র্যাব। এরমধ্যে হাটহাজারী থানার মামলায় ৩৩ জনকে এবং বাঁশখালী থানার মামলায় ২৮ জনকে আসামি করা হয়। দুটি মামলাতেই শাকিলা ফারজানাকে আসামি করা হয়।
চার্জশিটে বলা হয়, বাহরাইনের নাগরিক আল্লামা লিবদির নির্দেশে দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে আসামিরা নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলেন। দেশে তাদের বড় ভাই ওরফে জুনাইয়েদ নামের একজন তাদের পরিচালনা করতেন। কিন্তু গ্রেপ্তার আসামিরা বড় ভাই সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। হামজা ব্রিগেডকে সামরিক, দাওয়াহ ও মিডিয়া নামের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। সামরিক বিভাগকে হোয়াইট, ব্লু ও গ্রিন নামে ভাগ করেন। সামরিক বিভাগের প্রধান হলেন, মনিরুজ্জামান ওরফে ডন, দাওয়াহ বিভাগের প্রধান নাছির হোসেন, মিডিয়া বিভাগের প্রধান মো. আবদুল্লাহ। জঙ্গিদের কাছে অস্ত্রগুলো বিক্রি করেন অস্ত্র ব্যবসায়ী মোজাহের মিয়া। জঙ্গি অর্থায়নের জন্য মনিরুজ্জামান ওরফে ডনের তিনটি হিসাব নম্বরে আইনজীবী শাকিলা ফারজানা দুই দফায় ২৫ লাখ ও ২৭ লাখ টাকা, হাছানুজ্জামান দুই দফায় ১৫ লাখ ও ১৬ লাখ টাকা, মাহফুজ চৌধুরী ২৫ লাখ টাকা জমা করেন। এর আগে ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট জঙ্গি সংগঠন হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের অভিযোগে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শাকিলা ফারজানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতসূত্র জানায়, হাটহাজারী ও বাঁশখালী থানার উক্ত দুই মামলায় ৬১ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।