১০ বছর পর ভিকটিমকে উদ্ধারের মাধ্যমে কথিত ‘অপহরণ নাটক’ উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম। ২০১৩ সালে মামাবাড়ি যাওয়ার নাম করে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যায় মেয়ে। পরে তাকে বিয়ে করে একসঙ্গে বসবাস শুরু করে। মামাবাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া ও প্রেমিককে বিয়ে করার বিষয়টি জানত রূপার পরিবার। সবকিছু জানার পরও ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে কাল্পনিক অপহরণ মামলা করেন বাবা। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা। এর আগে শুক্রবার নোয়াখালীর সুধারাম থানার গুপ্তাংক গ্রাম থেকে ওই নারীকে ৪ বছরের ছেলে সন্তানসহ উদ্ধার করা হয়। রূপা শীল ওরফে প্রিয়া শীল ওরফে রিয়া তালুকদার (২৮) পটিয়া উপজেলার দৌলতপুর শীলপাড়া বড় উঠান এলাকার তিলক শীলের মেয়ে।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জনৈক তিলক শীল (৪৪) চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত–১ এ সুপ্লব দাশ ওরফে শিপলু, সুজন দে (২৫), বিপ্লব দাশ (২৭), সুমন দাশ, তাপস (৩১), মিন্টু দাশ (৫৫) ও শোভা রানী দাশের (৪৫) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি অনুসন্ধানের আগে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠান। পরে সিএমএম আদালতের পক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৬ষ্ঠ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ফরিদ আলম অনুসন্ধান শেষে ৬ জনের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে রিপোর্ট দাখিল করেন। সেই প্রেক্ষিতে আদালত ৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আগে সাক্ষ্য প্রমাণাদি গ্রহণ শুরু করেন।
বিচার চলাকালীন বিবাদী শিপলু দাশ, বিল্পব দাশ, সুজন দাশ প্রায় ৬ মাস ও মিন্টু দাশ ১ সপ্তাহ হাজতবাস করেন। পরে বিচার চলাকালীন বাদী তিলকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর মামলাটি তদন্ত ও ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারকে আদেশ দেন আদালত।
এরপর থেকে দীর্ঘদিন বাদী তিলক শীলের কাছ থেকে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে অপহৃত রূপা শীলকে (১৭) উদ্ধারের চেষ্টা করে পিবিআই। তবে বাদী তিলক ও তার পরিবার পিবিআইকে ভিকটিমের কোনো তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেনি। বাদী পক্ষের এমন উদাসীনতাকে কাজে লাগিয়ে ভিকটিমের পরিবারের উপর নজরদারিসহ তাদের সকল আত্মীয়কে নজরদারিতে রাখা হয়। দীর্ঘ নজরদারির পর পিবিআই টিম ধারণা করতে পারে, ভিকটিম রূপা শীলের সঙ্গে তার পরিবারের যোগাযোগ রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে কথিত ‘অপহৃত’ ভিকটিম রূপা শীলকে নোয়াখালী জেলার সুধারাম এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার চার বছরের ছেলে সন্তানকেও উদ্ধার করে পিবিআই।
পিবিআই চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, ভিকটিম ঘটনার আগে থেকেই বাবা–মার অবাধ্য হয়ে চলাফেরা করতেন। ঘটনার দিন ভিকটিম তার মামার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু আগে থেকে রনি নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠায় রূপা মামার বাড়িতে যাওয়ার নাম করে পালিয়ে যান। পরে প্রেমিক রনিকে বিয়ে করে পৃথকভাবে বসবাস শুরু করেন। রূপা মামার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া, রনি নামে যুবককে বিয়ে করা এবং পৃথক অবস্থানে থাকার বিষয়টি বাবা তিলক শীল ও তার পরিবার জানতেন। এরপরও তিলক শীল আগের শত্রুতার কারণে এবং অনৈতিক লাভের আশায় ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মেয়ে রূপা শীল অপহৃত হয়েছে উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, রূপা শীল পালিয়ে গিয়ে রনিকে বিয়ে করার পর সংসার করাকালীন বর্তমান স্বামী টিপু তালুকদারের সঙ্গে পরিচয় হয়। ২ বছর সংসার করার পর রনির সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে একাকী জীবন–যাপন করেন। পরে ২০১৮ সালে পুনরায় টিপু তালুকদারকে বিয়ে করেন এবং সে ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। রনি তালুকদারকে বিয়ের বিষয়টিও রূপার মা–বাবা অবগত ছিলেন। উদ্ধারকৃত অপহৃত ভিকটিম রূপা শীল সময়ে সময়ে নাম ও অবস্থান পরিবর্তন করতেন পরিবারের পরামর্শে। রূপা শীল ও তার ছেলেকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা।
