সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির বকেয়া বিলের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর নিয়মিত বিল পরিশোধ করছে না। বিল পরিশোধে চিঠি দেওয়ার পরও সেই চিঠির উত্তর আসে না বলে অভিযোগ ওয়াসার বাণিজ্যিক বিভাগের। বর্তমানে সরকারি–বেসরকারি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের কাছে ওয়াসার ১৬০ কোটি টাকার মতো বকেয়া পাওনা রয়েছে বলে রাজস্ব বিভাগ থেকে জানা গেছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ১০ বছর ধরে বকেয়া পরিশোধ করছে না। বকেয়া আদায়ে ওয়াসা বারবার চিঠি দিলেও খুব একটা লাভ হয়নি। এদের মধ্যে সরকারি আট শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের কাছে ওয়াসার বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি টাকা। নতুন বছরের শুরুতে বকেয়া আদায়ে তোড়জোড় শুরু করেছে ওয়াসা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ও রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া আদায় করা সহজ। তবে সরকারি সংস্থাগুলো থেকে টাকা আদায় করা অনেক কঠিন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রুমন দে আজাদীকে বলেন, প্রতি মাসে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের কাছে পানির বিল হয় ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে যেন ৯০ শতাংশ আদায় হয়, সেই টার্গেট থাকে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতি মাসে ওয়াসার পানির বিল পরিশোধের টার্গেট থাকে না। তারা প্রতি জুনে বিল পরিশোধ করে।
রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ও প্রাইভেট খাতে (আবাসিক গ্রাহক) ওয়াসার বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। বকেয়া আদায়ে বছরের পর বছর হিমশিম খায় ওয়াসা। ১ লাখ টাকার উপরে বকেয়া রয়েছে এমন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সংযোগ রয়েছে ৩ হাজার ২১২টি। এর মধ্যে বেসরকারি সংযোগ রয়েছে ২ হাজার ৯২৫টি আর সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংযোগ ২৮৭টি।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিলখেলাপির তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তাদের বিভিন্ন স্থাপনায় ৫০টি সংযোগের বিপরীতে বকেয়া রয়েছে ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৬১ হাজার ১৩৭ টাকা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের পরে ওয়াসার সবচেয়ে বেশি বিল পাওনা রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে। চসিকের ৯২টি সংযোগের বিপরীতে বকেয়া আছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭০ টাকা। এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় ওয়াসার ৩১টি সংযোগের বিপরীতে বিল বকেয়া ২ কোটি ৩০ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৫ টাকা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ১৪টি সংযোগের বিপরীতে ওয়াসার পাওনা ১ কোটি ৯ লাখ ৮২ হাজার ১৩৮ টাকা। এরপর বকেয়া বেশি রয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কাছে। এই প্রতিষ্ঠানের ২৪টি সংযোগের বিপরীতে বকেয়া আছে ১ কোটি ৮ লাখ ৩৪ হাজার ১৬০ টাকা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৩৬টি সংযোগের বিপরীতে ওয়াসার পাওনা ৫৮ লাখ ১০ হাজার ৪৪৩ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ১৫টি সংযোগের বিপরীতে ওয়াসার পাওনা ৪২ লাখ ৮১ হাজার ৬৭৮ টাকা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১১টি সংযোগের বিপরীতে বকেয়া রয়েছে ৪৮ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৫ টাকা।
ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, বারবার তাগাদা দিয়েও তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বকেয়া বিল আদায় করতে পারছেন না। কিন্তু জরুরি সার্ভিসের আওতায় থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেন না।
ওয়াসা সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার আয়ের একমাত্র উৎস হচ্ছে পানি বিক্রি। এ পানির ক্রেতা নগরীর ৮৭ হাজার ৫৪২ জন গ্রাহক। নগরের প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে এ পানি সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে আবাসিক বাসাবাড়ির গ্রাহকরা এক হাজার লিটার পানি পাচ্ছেন ১৮ টাকায়। বাণিজ্যিক বা অনাবাসিকে গ্রাহকরা একই পরিমাণ পানির জন্য ওয়াসাকে দিচ্ছেন ৩৭ টাকা।