১০ দিনে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের গাছের চারা বিক্রি হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) আয়োজিত বৃক্ষমেলায়। যা চসিকের উদ্যোগে আয়োজিত পূর্বের বৃক্ষমেলাগুলোর তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন নার্সারির মালিকরা। তাদের অভিযোগ, এবার প্রচারণা কম হয়েছে। তাই মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতার উপস্থিতিও ছিল কম।
গত ১৩ আগস্ট নগরের লালদীঘি ময়দানে চসিক আয়োজিত বৃক্ষমেলা শুরু হয়। ওই সময় মেলার সময়সীমা সাতদিন বলা হয়। তবে সময় বৃদ্ধি করে তা ১০ দিন করা হয়। ওই হিসেবে গতকাল শুক্রবার মেলার শেষ দিন। মেলায় অংশ নেয়া নার্সারি মালিকদের সংগঠন চট্টগ্রাম মহানগর নার্সারি মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, আজ শনিবারও মেলা চলবে।
মেলায় বিভিন্ন নার্সারির স্টলে পাওয়া যাচ্ছে দেশি–বিদেশি নানা ফলদ, বনজ, ওষধিসহ নানা প্রজাতির গাছের চারা আছে; নানা প্রজাতির ফুল গাছের চারা। লাকি বাম্বু, বনসাই, ক্যাকটাস, এডেনিয়াম, অর্কিড, থাই কাঠগোলাপসহ অন্যান্য গাছের চারাও পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় সর্বোচ্চ এক লাখ ৬০ হাজার টাকা চাওয়া হয় একটি বনসাইয়ের দাম। বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেছে, শুধু বিক্রি করছেন না, বাগান ও পরিচর্যা সর্ম্পকিত বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন বিক্রেতারা।
মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন নার্সারির বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে তারা জানান, শহরে থাকেন এমন ক্রেতারা শোভাবর্ধক গাছ বেশি কিনছেন। এক্ষেত্রে যেসব গাছ ঘরের ভেতর বা বারান্দায় রাখা যায় এমন গাছ বিক্রির তালিকায় ছিল এগিয়ে। তবে যাদের ছাদবাগান করার সুযোগ রয়েছে তারা বিভিন্ন ধরনের গাছ কিনছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ আজাদীকে বলেন, বেচাকেনা মোটামুটি হয়েছে। স্টল এবং অনলাইনে মিলিয়ে ১০দিনে ৪২ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। এবার ক্রেতা ও দর্শনার্থীর সংখ্যা অন্যবারের তুলনায় কম। অন্যান্যবার মেলা চলাকালে মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হত। এবার অনুষ্ঠান আয়োজন হয়নি। অনুষ্ঠান হলে লোকজন আসত। আগে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা একেক দিন অনুষ্ঠান করতো। স্কুলের শিক্ষার্থীরা আসত, তাদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকরা আসতেন। এতে মেলায় লোকসমাগম বাড়ত। তাদের অনেকেই গাছের চারা কিনতেন।
এদিকে কয়েকটি স্টল ঘুরে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডের ‘ভেরিগেট মালটা’ গাছের চারার দাম চাওয়া হয় আড়াই হাজার টাকা। কাটিমন আম গাছের চারার দাম আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। বিভিন্ন প্রজাতির বনসাই এর দাম পাঁচ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
মেলায় ‘জান্নাত শপ ডট সিটিজি’ এর স্টলে রয়েছে নানা প্রজাতির ৫০০ এর বেশি বনসাই, ক্যাকটাস এবং এডেনিয়াম এর সমাহার। এখানে ১০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দামের বনসাই রয়েছে। কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে জান্নাত শপ ডট সিটিজি এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আত–তাওয়াবুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, মোটামুটি সাড়া পাচ্ছি।
ফতেয়াবাদ নার্সারির বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, এক হাজার প্রজাতির গাছ রয়েছে তাদের নার্সারিতে। কসমো নার্সারির বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, কাটিমন আম, মেয়াজাকি আম, কিউ জাই আম, বারি–৪ আম, রুপালি, ব্যানানা, রামবুটান, লংগংফল, বারমাসি কাটাল, বিভিন্ন প্রজাতির লেবু চারা, লিচু, আনার, বেল, আমড়া, আমলকি, পেয়ারা, শরীফা, আতা, মেনিলাচেড়ি, ব্ল্যাক বেড়ি, মালবেড়ি, সফেদা, জাম্বুরা, জলপাই, কামরাঙা, জাম, নারকেল, সুপারি, করমচা, মিস্টি করমচা, কমলা, মালটা, মরিচসহ বিভিন্ন ফলদ গাছের চারা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া আছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ।
মোজাম্মেল নামে এক দর্শনার্থী আজাদীকে বলেন, ফুল গাছের চারা কিনতে এসেছি। পাঁঁচটা চারা নিলাম। পছন্দ হওয়ায় দুইটা ক্যাকটাসও নিয়েছি। দাম একটু বেশি মনে হয়েছে। তিনি বলেন, শহরে ভাড়া বাসায় থাাকি, ইচ্ছে থাকলেও ছাদবাগান করার সুযোগ নেই। তাই বারান্দায় রাখার উপযোগী চারা কিনলাম।
সাদিয়া নামে এক কলেজ ছাত্রী জানান, মেলায় এসে তার ভালো লাগছে। কারণ, এখানে নানা প্রজাতির গাছ সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে তার।
মেলার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা চসিকের কর্মকর্তা মইনুল হোসেন জয় বলেন, মেলায় মোট ৬১টি স্টল রয়েছে। মেলার সময়সীমা তিনদিন থেকে বৃদ্ধি করে ১০ দিন করা হয়।