১০ দিনের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি

দুই মাসের মধ্যে সম্মেলন, বাড়তে পারে কমিটির আকার

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নগর বিএনপির আওতাধীন ১৫ থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ডে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির আকার হবে ৪১ থেকে ৫০ সদস্যের। দলের ‘আন্দোলনসংগ্রামে’ অংশ নেয়ার পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদা আছে এমন ব্যক্তিরাই প্রাধান্য পাবেন আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পদে। এ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের দুই মাসের মধ্যে কাউন্সিল করা হবে থানা ও ওয়ার্ডে। যারা কাউন্সিলে সভাপতিসাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হবেন তারা আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হতে পারবেন না। একইসঙ্গে নগর বিএনপির বিদ্যমান কমিটিতে যারা পদে আছেন তারা থানা বা ওয়ার্ডে যে কমিটি হবে তার সদস্য বা অন্য কোনো পদে পাবেন না। যদি কেউ থানা বা ওয়ার্ড কমিটির পদ চান সেক্ষেত্রে তাকে নগর কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে নগরের লালখান বাজারের একটি রেস্টুরেন্টে এ সভা হয়েছে। এতে উপস্থিত নগর বিএনপির একাধিক নেতা আজাদীকে সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন বিএনপির মহানগর ও জেলাসমূহে সম্মেলন ও কাউন্সিল করার দায়িত্ব পাওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান।

জানা গেছে, সভায় নগর বিএনপির কমিটির আকার বৃদ্ধিরও প্রস্তাব এসেছে। একইসঙ্গে আকার বৃদ্ধি করলে সেক্ষেত্রে দলের মহিলা নেত্রীদের মধ্যে একজন প্রতিনিধি এবং হিন্দুবৌদ্ধ,-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী থেকে একজন প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাব করা হয়। এসব প্রস্তাবনা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান।

জানা গেছে, তৃণমূলে দলকে ‘শক্তিশালী’ ও নেতাকর্মীদের ‘সুসংঘটিত’ করতে বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর নেতৃবৃন্দের প্রতি নির্দেশনা আছে কেন্দ্রের। এক্ষেত্রে কাউন্সিলের মাধ্যমে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করতে বলা হয়। পরবর্তীতে এ সম্মেলন ও কাউন্সিল নিশ্চিত করতে গত ২৫ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব দেয়া হয় আহমেদ আযম খানকে। তাকে ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্র। পরবর্তীতে গত ৩ ডিসেম্বর নগরের ১৫ থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের কমিটি বিলুপ্ত করে নগর বিএনপি। এর একদিন পর ৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সভা করেন অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান। এতে ৮০ দিনের মধ্যে মহানগর ও উত্তরসহ ছয় জেলার তৃণমূল থেকে অর্থাৎ ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, ওয়ার্ড থেকে পৌরসভা এবং উপজেলা ও পৌরসভা থেকে জেলা কাউন্সিল সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর আরো এক মাস অতিক্রম হলেও কাউন্সিল করা নিয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় গতকাল নগর বিএনপির সাংগঠনিক সভা করে কাউন্সিল করার তাগিদ দেন আহমেদ আযম খান।

সভায় উপস্থিত নগর বিএনপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক নাম প্রকাশ না করে শর্তে আজাদীকে বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ আহ্বায়ক কমিটিকে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করতে হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব আসবে।

নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আজম খাজা (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আজাদীকে বলেন, প্রথমে থানায় আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। থানা কমিটি ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দিবে। এরপর ইউনিট কমিটি গঠন শেষে পুনরায় ইউনিট থেকে ওয়ার্ড ও থানায় কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।

১০ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নগর বিএনপির আহ্বায়ক চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন। তাই এটা কয়েকদিন বাড়তে পারে। তিনি বলেন, সভার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছেনগর বিএনপির পদধারীদের কেউ আহ্বায়ক কমিটিতে মেম্বার হতে চাইলে তাকে নগর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম আজাদীকে বলেন, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন ও কাউন্সিল সম্পন্ন করতে হবে। তিনি বলেন, নগর বিএনপির বিদ্যমান কমিটিতে আমাদের অনেক সহকর্মী বাদ পড়েছেন যারা যোগ্য ও ত্যাগী। এতে তারা হতাশাগ্রস্ত। তাদের কমিটিতে যুক্ত করার প্রস্তাব করেছি। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান। এছাড়া কমিটিতে মহিলা নেত্রীদের মধ্যে থেকে একজন নারী প্রতিনিধি এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে থেকে একজনকে অর্ন্তভুক্ত করার প্রস্তাব করি। সেটাও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান সাংগঠনিক সভায় বলেন, চট্টগ্রাম নগর বিএনপিকে পুনর্গঠন করার জন্য যে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে, সেটি তৃণমূল থেকে গণতান্ত্রিকভাবে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে কাউন্সিল করেই নগরের কাউন্সিল করবে। কোথাও অগণতান্ত্রিকভাবে মনোনীত কোনো কমিটি হবে না। কমিটি হবে তৃণমূল থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে এবং সকলের ভোট ও পুরো ইউনিটের মতামতের মাধ্যমে। আগে যেমন ছিল ইউনিটের সভাপতিসাধারণ সম্পাদক মতামত দিতেন, এখন আর তেমন হবে না। ইউনিটের প্রত্যেকের মতামত গ্রহণ করা হবে নেতা নির্বাচনের জন্য।

উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে মাত্র দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর প্রায় চার মাসের মাথায় গত ৩ নভেম্বর ৫৩ সদস্যে উন্নীত করা হয় এ আহ্বায়ক কমিটি। গত ১৫ নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা হয়। এতে নগর বিএনপির আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুর্নগঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগুমের মামলায় ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির নেতাকর্মীদের রোষের মুখে কোতোয়ালীর সাবেক ওসি নেজাম