চীন থেকে এ-ফোর সাইজের কাগজ ঘোষণায় বিপুল পরিমাণ সিগারেটের জাল ব্যান্ডরোল নিয়ে এসেছে নগরীর জুবিলী রোডের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আরাফাত এন্টারপ্রাইজ। মিথ্যা ঘোষণায় ব্যান্ডরোল আমদানির মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার কর্মকর্তারা।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, জুবিলী রোডের কাদের টাওয়ারের প্রতিষ্ঠান আরাফাত এন্টারপ্রাইজ ২০ ফুট কন্টেনারে ১২০ কার্টনে মোট ১ কোটি ৬২ লাখ পিস ১০ শলাকাবিশিষ্ট সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহারের উপযোগী হালকা খয়েরি রংয়ের জাল ব্যান্ডরোল নিয়ে আসে। এর মধ্যে নিম্নস্তরের ছিল ১ কোটি ৪১ লাখ ৭৫ হাজার পিস এবং মধ্যম স্তরের ২০ লাখ ২৫ হাজার পিস রয়েছে। যার ওজন ১ হাজার ২০০ কেজি। এছাড়া বাকি ১ হাজার ১৪০ কার্টনে এ-ফোর সাইজের কাগজ পাওয়া গেছে যার মোট ওজন ১৪ হাজার ৩৮০ কেজি এবং নিট ওজন ১২ হাজার ৫৪০ কেজি। এর আগে চালানটি আমদানির জন্য আমদানিকারক গত ৮ নভেম্বর ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড জুবিলী রোড শাখা থেকে এলসি (ঋণপত্র) ইস্যু করেছিল। কাস্টমসের পোর্ট কন্ট্রোল ইউনিট (পিসিইউ) ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় রপ্তানিকারক, রপ্তানিকারকের ওয়েবসাইট, তৈরি দেশ, আমদানিকারকের ব্যবসায়ের ধরণ ও ঠিকানা, পণ্যের বর্ণনা প্রভৃতি বিশ্লেষণ পণ্য চালানটিতে মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহারযোগ্য জাল ব্যান্ডরোল থাকার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পায়। পরবর্তীতে এআইআর টিমের সদস্যরা চালানটির বিল অব এন্ট্রিটি অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে লক করে রাখে। গতকাল জব্দ কন্টেনারটি নামিয়ে বন্দরের অভ্যন্তরে নিয়ম অনুযায়ী পণ্য পরীক্ষা শুরু করে এআইআরের কর্মকর্তারা। এসময় শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনার বিষয়টি ধরা পড়ে।
এআইআর শাখার কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এসআরও নং-১৪৭-আইন/২০২০/১০৮-মূসক, তারিখ: ১১/০৬/২০২০ খ্রি. অনুযায়ী নিম্নস্তরের সিগারেট স্ট্যাম্প এর রং হালকা খয়েরি যার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৯ টাকা থেকে ৬২ টাকা এবং যার বিপরীতে সম্পূকর শুল্কের হার ৫৭ শতাংশ এবং মূসকের হার ১৫ শতাংশ। এছাড়া এনবিআরের এসআরও নং: ১৮১-আইন/২০১৯/৩৮-মূসক তারিখ: ১৩ জুন, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ এর বিধি ১১ এর উপবিধি (৫) অনুযায়ী স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ হতে সংগ্রহ করতে হয় এবং বিধি (৬) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃক দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এবং সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি প্রতি ৩ মাস অন্তর প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সিগারেট স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোল সরবরাহ ও ব্যবহার আড়াআড়ি যাচাইপূর্বক প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মূসক বাস্তবায়ন শাখায় প্রেরণ করতে হয়। ফলে এই জাতীয় পণ্য দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান হতে ক্রয় অথবা বিদেশ থেকে আমদানি করার কোন সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (এআইআর শাখা) শরফুদ্দিন মিয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, চালানটির বিষয়ে গোপন সংবাদ থাকায় আমরা বিলম্ব না করে কন্টেনার ফোর্স কিপ ডাউন করে কায়িক পরীক্ষা শুরু করি। যার কারণে আমদানিকারক বিল অব এন্ট্রি দাখিলের সুযোগ পায়নি। আমদানিকারকের বিরুদ্ধে কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ এবং এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ১৪ ডিসেম্বর চীন থেকে আর্ট পেপারের ভেতর লুকিয়ে আনা ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার পিস সিগারেটের জাল ব্যান্ডরোল জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চালানটির আমদানিকারক নগরীর আন্দরকিল্লার বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ ৯০ থেকে ১৪৩ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি চেষ্টা করেছে বলে জানান কাস্টমস কর্তারা।