২০০৫ কি ২০০৭ নাগাদ, একটি টিভি শো–তে অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন আঁখি আলমগীর৷ গান শোনানো, ব্যক্তিগত আলাপ–আড্ডার পাশাপাশি দর্শকদের প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছিলেন তিনি। সে সময়ে প্রিয় তারকার সাথে এক মুহূর্ত কথা বলার সুযোগ পেতে অনেক অপেক্ষা করতে হতো। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারও ছিল কম। ফলে সকলেই টেলিভিশনের মাধ্যমেই নিজেদের বিনোদন, তথ্যের চাহিদা মেটাতেন। আনুমানিক সন্ধ্যার দিকে সে টিভি শো–তে আঁখি আলমগীরের জন্যে একটা ফোনকল আসে। সকলেই থমকে আছেন সে একটি ফোন কলে কেননা দর্শক অশ্রাব্য ভাষায় যৌন হয়রানিমূলক শব্দে আঁখি আলমগীরকে হেনস্তা করেছিলেন। এরপর অনেক বছর কেটে গেলো, টেলিভিশনের সামনে গুটি কয়েক মুখ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ এখন সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেইসবুকে নিজের মাথা নুয়েছেন। নারীর প্রতি যৌন হয়রানিমূলক কাজও আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এখন প্রকাশ্যে লাইভে যাওয়া, অন্যের ব্যক্তিগত ছবি দেওয়া, কমেন্টে নোংরা কথা বলা ইত্যাদি তার উদাহরণ।
বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০% নারী কোনো না কোনোভাবে অনলাইন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এটি শুধু মানসিক চাপই নয়, বরং কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন ও সামাজিক অবস্থানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই এ সমস্যার মোকাবিলায় নারীর সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত, নারীর নিজের ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, টু–ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখা, নিয়মিত প্রাইভেসি সেটিংস আপডেট করা এবং ব্যক্তিগত তথ্য সীমিতভাবে শেয়ার করার এসব অভ্যাস অনলাইন নিরাপত্তা জোরদার করে। দ্বিতীয়ত, হয়রানির শিকার হলে চুপ না থেকে প্রমাণ সংরক্ষণ করা (যেমন স্ক্রিনশট রাখা) এবং তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক মাধ্যমের রিপোর্টিং সিস্টেম অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ জানানো প্রয়োজন। বাংলাদেশে বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার ক্রাইম ইউনিট নারীদের জন্য বিশেষ সহায়তা প্রদান করে থাকে।
এছাড়া, নারীরা সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সবাইকে অনলাইন হয়রানির ঝুঁকি ও প্রতিরোধ কৌশল সম্পর্কে জানানো যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক কনটেন্ট প্রচার করা এবং সম্মানজনক আচরণকে উৎসাহ দেওয়া অনলাইনে সহনশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অনলাইন হেরাসমেন্টকে ব্যক্তিগত দুর্বলতা হিসেবে না দেখে এটিকে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা। একজন নারী দৃঢ় মনোভাব, আত্মবিশ্বাস এবং প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শুধু নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন না, বরং অন্য নারীদেরও সাহস জোগাবেন। নারীর সক্রিয় ভূমিকা পুরো সমাজকে অনলাইন সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।