হ্রদে ঘেরা রাঙামাটিতে নেই সাঁতার শেখানোর কোনো আয়োজন!

পানিতে ডুবে নিয়মিত মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ

| শনিবার , ২৭ জুলাই, ২০২৪ at ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

হ্রদে ঘেরা পার্বত্য জেলা শহর রাঙামাটিতে সাঁতার শেখানোর কোনো প্রতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেই। ফলে সাঁতার না জানা শিশুকিশোরবয়স্কদের পানিতে ডুবে মৃত্যু যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে পার্বত্য এ জেলায়। গেল মঙ্গলবার শহরের ইসলামপুর এলাকায় ৮ বছর বয়সি শিশু মো. ইসমাইল, বুধবার বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় মাঝবয়সি কালারাম চাকমার মৃত্যুর পর সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার হ্রদের পানিতে ডুবে দুই কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় একইসঙ্গে শোকাহত ও ক্ষুব্ধ শহরবাসী। শহর ঘিরে কাপ্তাই হ্রদ নামে পরিচিত প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটারের এ জলাশয়ে তিন দিনে চার জনের মৃত্যু ও আহত একজন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন অনেকেই। খবর বিডিনিউজের।

কোচ ও সাবেক ক্রিকেটার নাছির উদ্দিন সোহেল বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, যে জেলার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে পানির এই বিশাল হ্রদ। অথচ পুরো জেলায় সাঁতার শেখানোর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগ বা আয়োজন নেই। এটা মানা যায় না। সুশাসনের জন্য নাগরিকসুজনের রাঙামাটি জেলা কমিটির সম্পাদক জিসান বখতেয়ার বলেন, অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় ও বেহুদা উন্নয়ন কার্যক্রম হয় এখানে। উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানেরও অভাব নাই। কিন্তু জনগণের চাহিদার সঙ্গে এদের পরিকল্পনার কোনো সমন্বয় নাই। তিনি প্রশ্ন রাখেন, নইলে হ্রদ বিস্তৃত একটি শহরে কেন সুইমিংপুল বানিয়ে সাঁতার শেখানোর কোনো আয়োজন থাকবে না? এসব মৃত্যুর দায় অবশ্যই স্থানীয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলোকেও নিতে হবে।

নিশু সাহা নামে এক চিকিৎসা বলেন, যেহেতু এই শহর ঘিরে বিশাল জলরাশি, জেলাজুড়ে বিস্তৃত হ্রদ, সুতরাং এখানকার মানুষের সাঁতার জানাটা ভীষণ জরুরি। কিন্তু আমরা দেখি, এ ব্যাপারে কোনো আয়োজন বা উদ্যোগ নেই। খুব দ্রুতই কিছু একটা করা দরকার। নইলে এসব মৃত্যু থামবে না।

রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম বলছেন, এটা ঠিক যে, এ জেলার মানুষের সাঁতার জানাটা জরুরি। কিন্তু এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কখনো। এক সময় নিয়মিত সাঁতার প্রতিযোগিতা হত, এখন সেটিও নাই। জাতীয় পর্যায় থেকে যখন সাঁতারের জন্য প্রতিযোগী পাঠাতে বলে আমরা পাঠাতে পারি না। কোনো একটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের একটি সুইমিংপুল করে দেয় তবে আমরা সেটিকে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ নিতে পারতাম।

রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, রাঙামাটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যু একটি বড় সমস্যা। হ্রদের পানি বিস্তৃত এই জেলায় অবশ্যই সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ থাকা উচিত। সাঁতার না জানার কারণেই প্রতি বছর জেলায় অনেক মানুষ মারা যায় পানিতে ডুবে। আমরাও চাই এখানকার মানুষ সাঁতার শিখুক, সাঁতার জানুক এবং জীবন নিরাপদ হোক।

জেলায় প্রতিবছর পানিতে ডুবে ঠিক কতজন মারা যান নিজেদের কাছে এর কোনো পরিসংখ্যান নেই জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত যেসব ঘটনায় মানুষ নিজেরা উদ্ধার করতে না পেরে আমাদের ডাকেন, সেইসব তথ্যই শুধু আমাদের কাছে নোট থাকে। যেহেতু পুরো জেলাজুড়ে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম নেই এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ নিজেরাই উদ্ধার করে ফেলেন তাই আমরা অনেক তথ্যই পাই না। তবে যেটুকু পাই, তাও বিপদজনকই।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এত বড় একটি হ্রদ এখানে, ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণও। ফলে মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্যই সাঁতার জানা জরুরি। আমি চেষ্টা করব, দ্রুতই এ বিষয়ে একটি উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেন সবাই সাঁতার শিখতে পারেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাগরে লঘুচাপ, ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে বাণিজ্য খাতে ২৫০ কোটি টাকার ক্ষতি