জাদু শিল্পের বিস্ময়কর জগতে হ্যারি হুডিনি এক অবিস্মরণীয় প্রতিভা। অল্প বয়সেই হুডিনি জাদুর আশ্চর্য সব কলাকৌশল চমৎকারভাবে রপ্ত করে নেন আর তাঁর জাদু জয় করে নেয় দর্শকচিত্ত। উনিশ শতকের শেষ দিকে বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে হুডিনির নাম।
হুডিনির প্রকৃত নাম এরিখ ভাইস। জন্ম ১৮৭৪ সালের ২৪ মার্চ হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে। এরিখের জন্মের পর পরই তাঁদের পুরো পরিবার পাড়ি জমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। পরিবারটিতে দারিদ্র্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী। তাই ছেলেবেলাতেই এরিখকে কাজের সন্ধানে পথে নামতে হয়। প্রথমে খবরের কাগজ বিক্রি, এরপর কাজ নেন নেক টাই তৈরির একটি কারখানায়। এখানে সহকর্মী জ্যাক হ্যাম্যানের কাছে জাদুবিদ্যায় হাতেখড়ি তাঁর। এরপর থেকেই চলতে থাকে দৃঢ়সংকল্প, আত্মবিশ্বাসী হুডিনির জাদুশিল্পী হবার প্রচেষ্টা। হাতেকলমে চর্চার পাশাপাশি জাদু সংক্রান্ত কিছু বইপত্র পড়ে তিনি নানা বিষয়ে অবগত হন। হুডিনির সামনে খুলে যায় এক নতুন জগতের স্বপ্ন দুয়ার। অক্লান্ত পরিশ্রম, পরম আত্মবিশ্বাস, অসাধারণ মেধা আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে তিনি জাদুশিল্পকে এক নতুন ব্যাপ্তি দেন। তাঁর জাদুর একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল বন্ধন থেকে ‘মুক্তি’। জমাট গাঁথুনির দেয়াল, মুখ বাঁধা ও সিলমোহর করে দেওয়া দড়ির ভেতর থেকে, পেরেক দিয়ে বন্ধ শক্ত কাঠের বাক্স থেকে, বন্ধ কফিন, লোহার বয়লার, তালা আটকানো দুধের ভাড় – এসব বন্ধন থেকে চমৎকার কৌশলে তিনি মুক্ত হয়ে আসতেন কিন্তু সিলমোহর, পেরেক ঠাসা বাক্স, বন্ধ কফিন – এসব যেমন ছিল তেমনই থেকে যেত। এইসব জাদু তাঁকে পরিণত করে ‘বিপ্লবী মুক্ত আত্মার প্রতীক’এ – কোনো বাঁধনেই যাঁকে বাঁধা যায় না। ১৯২৬ সালের ৩১ অক্টোবর হ্যারি হুডিনি প্রয়াত হন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হুডিনির জীবন নিয়ে গ্রন্থ রচিত হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘যাদুর রাজা হুডিনি’ নামের একটি বই।