হ্যারিয়েট এলিজাবেথ বিচার স্টো (১৮১১–১৮৯৬)। তিনি ছিলেন একজন মার্কিন লেখিকা এবং দাসপ্রথা বিলোপ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। তিনি ১৮১১ সালের ১৪ই জুন কানেটিকাটের লিচফিল্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ক্যালভানিস্ট ধর্মযাজক লাইম্যান বিচার (১৭৭৫–১৮৬৩)। তিনি দাসপ্রথা বিলোপের পক্ষে ছিলেন। তার মাতা রোক্সানা বিচার একজন ধর্মপ্রাণ মহিলা ছিলেন। স্টো পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারান। রোক্সানার মাতামহ অ্যান্ড্রু ওয়ার্ড ছিলেন মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন জেনারেল। ১৩ ভাইবোনের মধ্যে হ্যারিয়েট সপ্তম। বড় বোন ক্যাথরিনের কাছে তার লেখাপড়ার হাতেকড়ি। ছোটবেলা থেকেই তার বই পড়ার নেশা ছিল। তার সবচেয়ে প্রিয় বই ছিল আরব্য রজনী। ছোটবেলা থেকে তিনি দাসদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন দেখে বড় হয়েছেন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাংশে নির্যাতন বেশি ছিল। আমেরিকার দক্ষিণাংশের অঙ্গরাজ্য, অর্থাৎ সাউথ ক্যারোলিনা, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, ফ্লোরিডা, অ্যালাবামা, জর্জিয়া দাসপ্রথার পক্ষে ছিল। ফলে তার মূল পরিকল্পনা ছিল উত্তরাংশের অঙ্গরাজ্যগুলোর (ভার্জিনিয়া, আরকানসাস, নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্য) মানুষদের দাসপ্রথার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানানো। সে পরিকল্পনা থেকেই তিনি ন্যাশনাল এরায় লিখতে শুরু করেন। আফ্রিকান–মার্কিনদের দাসত্বের রুঢ় অবস্থা নিয়ে রচিত ‘আঙ্কল টমস্ কেবিন’ বইটি তাকে বেশ পরিচিতি এনে দেয়। বইটি উপন্যাস ও নাটক হিসেবে মিলিয়নের অধিক কপি বিক্রি হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তিনি তাঁর লেখনির মাধ্যমে চলমান দাসপ্রথা সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা সৃষ্ট করেছেন এবং মানুষকে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার করেছেন। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাংশে দাসত্ব–বিরোধী দল গড়ে ওঠে, অন্যদিকে দক্ষিণাংশে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। স্টো উপন্যাস, আত্মকথা, প্রবন্ধ ও চিঠিসহ ৩০টি বই রচনা করেন। তিনি তার রচিত বইসমূহ ও সামাজিক সমস্যার ক্ষেত্রে তার অবস্থানের জন্য প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। ১৮৯৬ সালের ১লা জুলাই ৮৫ বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্টফোডে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।