মাত্র মাস দুয়েক আগের কথা। পাকিস্তানে গিয়ে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হয়ে এসেছিল বাংলাদেশ। সে হারের শোধ নেওয়ার দারুণ সুযোগ আসে বাংলাদেশের সামনে ঘরের মাঠে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জিতে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ে।
গতকাল সুযোগ ছিল আরো একটি ইতিহাস গড়ার। আর তা হচ্ছে পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করা। কিন্তু সেটা করতে পারল না লিটন দাশের দল। অধিনায়ক নিজের মতো তার দলও ব্যর্থ হলো এই ম্যাচে। ফলে শেষ ম্যাচটিতে হারতে হলো বাংলাদেশকে ৭৪ রানে। অপরদিকে প্রথম দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ হারানো পাকিস্তান শেষ ম্যাচে জিতে কিছুটা হলেও মান রক্ষা করল। আর তাদের এই জয়টা এমন এক সময় আসল যখন সে দেশের ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মাঠে বসে খেলা দেখলেন। তাই হয়তো তাদের বোর্ড চেয়ারম্যানকে হতাশ করল না পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। কিন্তু বাংলাদেশ পারল না আরেকটি ইতিহাস গড়তে। মিরপুরের উইকেট বিচারে বল হাতে জ্বলে উঠতে পারল না বাংলাদেশের বোলাররা। কারণ আগের দুই ম্যাচে যেখানে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ১৩৩ রানের সেখানে গতকাল পাকিস্তান তুলে নেয় ১৭৮ ।
যদিও টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে এতরান হার হামেশাই টপকে যাচ্ছে বিভিন্ন দল। কিন্তু এতরান টপকাতে যেমন ব্যাটিং দরকার সেটা করতে পারল না বাংলাদেশের ব্যাটাররা। পাকিস্তানের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এর পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যাটারদের দায়িত্বহীন ব্যাটিং আরেকটি ইতিহাস গড়া হলো না। উল্টো শেষ ম্যাচে লজ্জার হার বরণ করতে হলো। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে মাত্র দুজন ব্যাটার দুই অংকের ঘরে যেতে পেরেছে। বিশেষ করে সাইফুদ্দিনের ৩৫ রান না হলে হয়তো আরো বড় লজ্জায় পড়তে হতো বাংলাদেশকে। তারপরও সিরিজ জয়টা সবচাইতে বড় প্রাপ্তি।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের দুই ওপেনার শাহিবজাদা ফারহান আর সাইম আইয়ুব দারুণ সূচনা করেন। বিশেষ করে ঝড় তুলেন ফখর জামানের বদলে ওপেনে নামা ফারহান। ২৯ বলে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৫৮ রান তোলে পাকিস্তান। অবশেষে ৪৬ বলে ৮২ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে শামীম পাটোয়ারীর ক্যাচ হন সাইম। ১৫ বলে তিনি করেন ২১ রান। মারকুটে শাহিবজাদা ফারহানকেও ফেরান নাসুম। সুইপ করতে গিয়ে মিডউইকেটে শেখ মেহেদীর হাতে ধরা পড়েন ফারহান। ৪১ বলে তার ৬৩ রানের ইনিংসে ৬টি চার এবং ৫টি ছক্কা মেরেছেন এই পাকিস্তানি ওপেনার। দুর্দান্ত শুরুর পরও ধীর গতিতে খেলছিলেন মোহাম্মদ হারিস। ১৪ বল খেলে শেষ পর্যন্ত ৫ রান করে তিনি হন তাসকিন আহমেদের শিকার। পরের ওভারে হাসান নেওয়াজকে শেখ মেহেদীর দারুণ এক ক্যাচে পরিনত করে ফেরান শরিফুল ইসলাম। ১৭ বলে ১ চার আর ৩ ছক্কায় নেওয়াজ করেন ৩৩ রান। সাইফুদ্দিন এসে ফেরান ১ রান করা হুসাইন তালাতকে। দারুন শুরুর পরও ১৩২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে পাকিস্তান। তবে শেষদিকে মোহাম্মদ নওয়াজের ১৫ বলে ২৭ আর অধিনায়ক সালমান আগার ৯ বলে ১২ রানের উপর ভর করে ১৭৮ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাড় করায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ ৩৮ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট। নাসুম আহমেদ ২২ রানে ২টি আর শরিফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নেন একটি করে উইকেট।
১৭৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ঠিক আগের ম্যাচে পাকিস্তানের শুরুর মত। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই তানজিদ তামিমকে ফেরান সালমান মির্জা। দলের খাতায় তখনো এক রানও যোগ হয়নি। দ্বিতীয় ওভারে ফাহিম আশরাফের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন অধিনায়ক লিটন। এই সিরিজে ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ লিটন করলেন যথাক্রমে ১, ৮ এবং ৮। নিজের দ্বিতীয় ওভারে সিরিজে প্রথম খেলতে নামা মেহেদী হাসান মিরাজকে ফেরান ফাহিম নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে। ৮ বলে ৯ রান করেন মিরাজ। এরপর সালমান মির্জার জোড়া আঘাত। নিজের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ফেরান আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক জাকের আলিকে। একবল পর শেখ মেহেদী হাসানকে ফেরান সালমান। ২৫ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ভরসা যখন শামীম হোসেন তখন তাকেও দাঁড়াতে দিলেন না সালমান আলি আগা। দারুণ এক চার মেরে শুরু করা শামীমকে বোল্ড করেন সালমান আগা। ৩৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টায় তখন বাংলাদেশ। এরপর একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াইটা চালিয়ে যান সাইফুদ্দিন। কিন্তু অপর প্রান্তে তাকে কেউ সঙ্গ দিতে পারছিলেন না।
ফলে অপর প্রান্তে সতীর্থদের আসা যাওয়া দেখলেন সাইফুদ্দিন। মোহাম্মদ নেওয়াজ এবং হুসাইন তালাতের তোপের মুখে পড়ে একে একে ফিরেন নাসুম, তাসকিন এবং শরীফুল। আর তাতে ১০৪ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। ৩৪ বলে ২টি চার এবং ২টি ছক্কায় ৩৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন সাইফুদ্দিন। পাকিস্তানের পক্ষে ১৯ রানে ৩টি উইকেট নেন সালমান মির্জা।