আগেই সিরিজ খুঁইয়েছিল বাংলাদেশ দল। তারপরও ছুটির দিনে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরিয়ে তুলেছিলেন চট্টগ্রামের দর্শকরা। কিন্তু তাদের সেই উল্লসিত উপস্থিতি হতাশায় পরিণত হয়। কারণ শেষ ম্যাচেও বাজেভাবে হেরে যায় বাংলাদেশ। আর দেশের বাইরে প্রথমবার ৩–০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতকাল শুক্রবার সিরিজের তৃতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১৬ ওভার ৫ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজি নিশ্চিত করে রেখেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাই তৃতীয় টি–টোয়েন্টি ছিল বাংলাদেশের জন্য মান বাঁচানোর লড়াই। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হয়েছে লিটন দাসের দল। ব্যাটিং–বোলিং কোনো বিভাগেই ন্যূনতম লড়াই করতে পারেনি টাইগাররা। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শেই হোপকে বিশ্রাম দিয়েও শেষ ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ল বাংলাদেশকে।
গতকাল বাংলাদেশ ইনিংসে তানজিদ হাসানের একার রান ছিল ৬২ বলে ৮৯। বাকি সবাই মিলে রান করলেন ৫৮ বলে ৫৭। বোলিংয়ে ধারহীন প্রায় সবাই। ফিল্ডিং ক্যাচ ছুটে গেল একের পর এক। সবকিছুর ফলাফল বাংলাদেশের আরেকটি পরাজয়। বোলিংয়ে শুরুটা ভালোই করেছিলেন শেখ মেহেদি ও শরিফুল ইসলাম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের দেখা পেত বাংলাদেশ। তবে ক্যাচ মিস করেন স্লিপে থাকা সাইফ হাসান। তবে ব্রেকথ্রু পেতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। তৃতীয় ওভারেই আলিক আথানজেকে ফিরিয়ে দলকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন মেহেদি। ব্রেন্ডন কিংকে দ্রুতই ফেরান আরেক স্পিনার নাসুম আহমেদ। ৭ বলে ৮ রান করে কিং ফিরেছেন। দ্রুত দুই উইকেট হারালেও ক্যারিবিয়ানদের রানের চাকা সচল রাখেন আমির জাঙ্গু। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা এই ওপেনারকে ফেরান রিশাদ হোসেন। ২৩ বলে ৩৪ রান করেছেন তিনি।
৫২ রানে ৩ উইকেট তুলে ভালোই লড়াই করছিল বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে রোস্টন চেস ও আকিম অগাস্টে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন। দুজনেই পেয়েছেন ব্যক্তিগত ফিফটি। ৫০ রান করে চেস ফিরলে ভাঙে ৯১ রানের সেই জুটি। অগাস্টে করেছেন ২৫ বলে ৫০ রান। ফিফটির পরপরই দুই ব্যাটার ফিরে যান। তবে ততক্ষণে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে গেছে। বাকি কাজটা সহজেই সেরে নেন রভম্যান পাওয়েল ও গুড়াকেশ মোতি। রিশাদ ৪৩ রান দিয়ে ৩টি উইকেট পান। ১টি করে উইকেট নেন মেহেদি হাসান এবং নাসুম আহমেদ।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে দেখে–শুনে খেলার চেষ্টা করেন দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও পারভেজ ইমন। সিরিজে প্রথমবার একাদশে সুযোগ পাওয়া ইমন দারুণ এক ছক্কা হাঁকিয়ে ভালো শুরুর ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি এই ওপেনার। ১০ বলে ৯ রান করেন তিনি। তিনে নেমে প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন লিটন দাস। উইকেটে এসেই আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত ৯ বলে করেন ৬ রান। লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন সাইফ হাসান। চারে নেমে তানজিদ তামিমকে সঙ্গ দিয়েছেন তিনি। ২২ বলে ২৩ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
আগের ম্যাচে দলের বাকি ব্যাটাররা ব্যর্থ হলেও ফিফটি করেছিলেন তামিম। গতকালও দারুণ শুরু পেয়ে সেটা কাজে লাগান এই ওপেনার। ৩৬ বল খেলে স্পর্শ করেছেন ব্যক্তিগত ফিফটি। ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। থেমেছেন ৬২ বলে ৮৯ রানে করে। যা আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। সাইফ ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। নুরুল হাসান সোহান–জাকের আলিরা পুরোপুরি ব্যর্থ ছিলেন। তাতে বড় সংগ্রহ পাওয়া হয়নি। ম্যাচ সেরা হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের রস্টন চেজ এবং সিরিজ সেরা হন রোমারিও শেফার্ড।












