হোটেল মালিকসহ ৫ জনের যাবজ্জীবন

সদরঘাটে জোড়া খুন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৮:২২ পূর্বাহ্ণ

ছয় বছর আগে নগরীর সদরঘাটে হোটেলে এক নারীসহ জোড়া খুনের পর লাশ গুম করার ঘটনায় হোটেল মালিকসহ ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ৫ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস চৌধুরীর আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। আসামিরা হলেন সদরঘাট থানাধীন হোটেল আকাশের মালিক বাহার উদ্দিন, বাচা মিয়া, খোরশেদ আলম, মনির ও গোলাম মাওলা বাবুল। অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট এস এম ফারুক গতকাল আজাদীকে বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সমস্ত তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্যগ্রহণ উপস’াপনপূর্বক আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় দিয়েছেন।
আদালত ৫ আসামিকে ৩০২ ধারার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং ২০১ ধারায় অপরাধে আরও ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। রায়ে চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন আবুল কালাম, লিয়াকত আলী, ঝন্টু চন্দ্র দাশ প্রকাশ স্বপন দাশ ও শাহাদাত হোসেন সাজ্জাদ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বাচা মিয়া ও মো. মনির। বাকি চার আসামি পলাতক রয়েছে।
অ্যাডভোকেট ফারুক বলেন, পলাতক চার আসামির মধ্যে মূল হোতা বাহার উদ্দিন রায়ের আগে সোমবার আদালতে সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন। মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময় আসামি তিনি অনুপসি’ত ছিলেন।
২০১৪ সালের ৩ মে সদরঘাট থানাধীন হোটেল আকাশে হাবিব ও মায়াকে পরিকল্পিতভাবে মারধর ও শ্বাসরোধের মাধ্যমে হত্যা করেন হোটেলটির মালিক ও ম্যানেজারসহ অন্য আসামিরা। পরে লাশ দুটি গুমের জন্য একটি মাইক্রোবাসে করে হোটেল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। মায়ার লাশটি বোরকা পরিয়ে রোগী সাজিয়ে এবং হাবিবের লাশটিকে বস্তাবন্দি করে হোটেল থেকে বের করে মাইক্রোবাসে তোলা হয়। মায়ার লাশ সিআরবি রেলওয়ে অফিসার্স রেস্ট হাউজের একটি ড্রেনের নিচে এবং হাবিবের বস্তাবন্দি লাশটি জোরারগঞ্জ থানাধীন সোনাপাহাড় এলাকায় ফেলে পালিয়ে আসেন আসামিরা।
৪ মে কোতোয়ালী পুলিশ সিআরবি থেকে মায়ার লাশ উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা (৭(৫)১৪ ইং) দায়ের হয়েছিল। ২০১৫ সালে ১৫ আগস্ট মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিকাশ চন্দ্র শীল ৯ আসামিকে অভিযুক্ত করে দণ্ডবিধি ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৬ সালে ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে মামলাটির আনুষ্ঠানিক বিচারকার্য শুরু হয়েছিল। এ মামলায় আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণপূর্বক রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সদরঘাট থানাধীন ওই হোটেলে দেহব্যবসা চলত। ঘটনার দিন হাবিব হোটেলে মায়াকে নিয়ে এসেছিল। পরে ভিকটিমদের সাথে খদ্দেরের ঝামেলা থেকে হোটেল মালিকসহ অন্য আসামিদের সাথে বিবাদ হয়। দেহব্যবসার কথা ফাঁস হওয়ার ভয়ে আসামিরা দুজনকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। ওই রাতেই দুজনকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
জানা গেছে, জোরারগঞ্জ এলাকা থেকে হাবিবের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ওখানকার থানায় একটি মামলা হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, জোরারগঞ্জ থানার মামলাটি এখনো সাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে।
জানা গেছে, খুনের ঘটনায় ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপক্ষ ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে। এ সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মনির হাই কোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। হাই কোর্ট আসামির জামিন আবেদন প্রশ্নে রুল জারি করার পাশাপাশি নিম্ন আদালতকে ছয় মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে হাই কোর্টে জামিন চেয়ে আবারো আবেদন করেন মনির। তখন উ”চ আদালতের আদেশ কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি সেই বিষয়ে চট্টগ্রাম আদালতের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এরপর আদালতের বিচারক হাই কোর্টে একটি লিখিত ব্যাখ্যা দেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে আবারও জামিন চেয়ে আবেদন করেন মনির। তখন হাই কোর্ট বিচারিক আদালতকে ২০১৯ সালের ৩০ মার্চের মধ্যে বিচার সম্পন্নের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে হাই কোর্টে বিচার সম্পন্নের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সেই নির্দেশের পর দুই বছর পার হলেও মামলাটির বিচার শেষ না করায় সংশ্লিষ্ট বিচারককে তলব করেন হাই কোর্ট।
গত ৮ ডিসেম্বর ৫ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের কাছ থেকে নথি তলব করে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন হাই কোর্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআহত হওয়ার কথা বলে বন্ধুর বাসায় ডেকে প্রেমিকাকে ধর্ষণ
পরবর্তী নিবন্ধপঞ্চাশে বাংলাদেশ