হে আল্লাহ, সমগ্র বিশ্বকে করোনামুক্ত করুন

পবিত্র ঈদুল-আজহা উপলক্ষে প্রার্থনা

| মঙ্গলবার , ২০ জুলাই, ২০২১ at ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র ঈদুল-আজহা আগামীকাল। করোনাকালে এই দিনে আমাদের প্রার্থনা- মহান আল্লাহতালা সমগ্র বিশ্বকে সুস্থ করে তুলুন। এই ঈদুল আজহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কুরবানি। মুসলমানদের মধ্যে যে দুই ঈদ বিদ্যমান, সেই ঈদের আনুষ্ঠানিকতা ভিন্ন রকম হলেও মূলগত তাৎপর্য একই, মহান সৃষ্টিকর্তার সমীপে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। ত্যাগের আনন্দ ও উৎসবে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ধনী-দরিদ্র, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সব মুসলমান মিলেমিশে ঈদের আনন্দ সমভাগ করে নেন, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার ভুলে খুশিমনে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করেন। প্রতিবছর মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র হজের পরই গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু কোরবানি দিয়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়।
ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, ঈদুল আজহার গুরুত্ব ও আনন্দ অপরিসীম। উৎসব হিসেবে পবিত্র ধর্মীয় অনুভূতি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসলামের জীবন আর ধর্ম একই সূত্রে গাঁথা। তাই ঈদ শুধু আনন্দের উৎস নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কর্তব্যবোধ, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের বৈশিষ্ট্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সমপ্রীতির ভাবটা এখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এলাকার মানুষ ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে সমবেত হয়। এতে সবার মধ্যে একাত্মতা ও সমপ্রীতি ফুটে ওঠে-ইসলামের মহান ভ্রাতৃত্ববোধে সবাই উদ্দীপ্ত হয়। পরস্পর কোলাকুলির মাধ্যমে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পর ভাই বলে গৃহীত হয়। ধনী-গরিবের ব্যবধান তখন আর থাকে না। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগ করে নেয়। ফলে ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র, আত্মীয়স্বজন- সবাই পরস্পর ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে। ঈদ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভোলার জন্য, মানুষের মধ্যে প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হওয়ার জন্য পরম মিলনের বাণী নিয়ে আসে। ঈদুল আজহায় যে কোরবানি দেওয়া হয়, তার মাধ্যমে মানুষের মনের পরীক্ষা হয়, কোরবানির রক্ত-মাংস কখনোই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। কোরবানির মাধ্যমে দেখা হয় মানুষের হৃদয়কে। ঈদের মধ্যে আছে সাম্যের বাণী, সহানুভূতিশীল হৃদয়ের পরিচয়। পরোপকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় মানুষের মন।
মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানি পর্ব এবং অপরিহার্য এ ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রবর্তক। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা ও গভীরতম আত্মসমর্পণে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ কোরবানি করার নির্দেশ প্রদান করেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) প্রিয়তম বস্তু তথা তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার জন্য স্বপ্নে আদিষ্ট হয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে নিজের প্রাণপ্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন, যা সর্বকালের মানব ইতিহাসে ত্যাগের সর্বোচ্চ নিদর্শন। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কুদরত ও রহমতে শিশুপুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হলো। এর মাধ্যমে হজরত ইব্রাহিম (আ.) ত্যাগের চরম পরীক্ষায় আল্লাহর দরবারে উত্তীর্ণ হয়ে যান। এরপর থেকে বিশ্বের মুসলমানদের জন্য জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে হালাল পশু কোরবানি করার রেওয়াজ চালু হয়। আরবি শব্দ ‘কুরবাতুন’ বা ‘কুরবান’ থেকে কোরবানি শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ ত্যাগের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানির মাধ্যমে ঈদুল আজহার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘সুতরাং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে নামাজ কায়েম করো এবং কোরবানি করো।’ (সূরা আল-কাওছার, আয়াত: ২) রাসুলুল্লাহ (দ.)-এর কাছে সাহাবিরা আরজ করলেন, ‘এ কোরবানি কী? উত্তরে তিনি বললেন, এটি তোমাদের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত।’ (ইবনে মাজা ও আহমাদ)। নবী করিম (দ.) বলেছেন, ‘কোরবানির দিনে আল্লাহর কাছে রক্ত প্রবাহিত (কোরবানি করা) অপেক্ষা প্রিয়তর কোনো কাজ নেই। অবশ্যই কিয়ামতের দিন (কোরবানিদাতার পাল্লায়) কোরবানির পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ হাজির হবে। কোরবানির রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার আগেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা প্রফুল্ল মনে কোরবানি করো।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজা)
প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনে দুটো প্রবৃত্তি রয়েছে, একটি পশুপ্রবৃত্তি, অপরটি বুদ্ধিবৃত্তি। পশুপ্রবৃত্তিকে সংযত রেখে বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োগে মানুষ যখন জীবনকে সুন্দর, সুষ্ঠু ও সুপথে পরিচালিত করে, তখন একে আদর্শ জীবন বলে অভিহিত করা হয়। প্রতিবছর ঈদুল আজহা মুসলিম জাতির ঈমানী দুর্বলতা, চারিত্রিক কলুষতা দূর করে ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমায় তাদের ঈমানী শক্তিকে বলিয়ান, নিখুঁত ও মজবুত করে। মুসলমানগণ এ কোরবানির মাধ্যমে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দীক্ষা নেয়। ঈদের মধ্যে আছে সাম্যের বাণী, সহানুভূতিশীল হৃদয়ের পরিচয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে