হে আল্লাহ! করোনা মহামারি থেকে আমাদের রক্ষা করো

লাইলাতুল কদরের প্রার্থনা

| রবিবার , ৯ মে, ২০২১ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

আজ রবিবার দিবাগত রাত লাইলাতুল কদর। বছর ঘুরে ফিরে এলো সেই ইবাদতের রাত। আমাদের মাঝে আল্লাহপাক যে একটি রাত ইবাদত বন্দেগিতে হাজার মাসের চেয়েও অধিক সাওয়াব অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সে সম্মানিত ও মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর। কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রজনী। সহস্র মাসের ইবাদত-বন্দেগিতে যে পুণ্য অর্জিত হয়, তার চেয়েও বেশি পুণ্য অর্জিত হয় এই বরকতময় রাতের ইবাদত-বন্দেগিতে। আল্লাহপাক এ রজনীর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা অবতীর্ণ করেছেন। পবিত্র কুরআনুল করিমে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- নিশ্চয় আমি কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর তুমি কি জানো কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ (হযরত জিবরাঈল) অবতীর্ণ হয়। প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি সেই রজনী, সুবহে সাদিক পর্যন্ত- (সুরা আল-কদর, আয়াত: ১-৫)। একদিন নবী করিম (সা.) বনী ইসরাঈলের শামউন নামক একজন আবিদ ও জাহিদের দীর্ঘকালের কঠোর সাধনা সম্পর্কে বলছিলেন। সে মহৎ ব্যক্তি এক হাজার মাস লাগাতার সিয়াম ও জিহাদে রত থাকতেন এবং সারারাত জেগে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি ও জিকির-আজকারে কাটিয়ে দিতেন। সাহাবায়ে কিরাম আবিদ ও জাহিদের কথা শুনে নিজেদের স্বল্প আয়ুর কথা ভেবে আফসোস করে বললেন- হায়! আমরাও যদি ঐ লোকটির মতো দীর্ঘ হায়াত পেতাম তাহলে আমরা ওই রকম ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করতাম। এ সময় আল্লাহপাক এ সম্মানিত সুরা আল-কদর অবতীর্ণ করেন।
স্বয়ং আল্লাহপাক আল কোরআনে এ রাতের মর্যাদা ও তাৎপর্য নিয়ে এরশাদ করেছেন- নিশ্চয়ই আমি এই কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা স্বীয় পালনকর্তার নির্দেশে অবতীর্ণ হন। হযরত আনাস (রা.)-এ বর্ণিত আছে- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, লাইলাতুল কদরের এই রাত কেবল আমার উম্মতরাই পেয়েছে। মানুষের প্রতি আল্লাহপাকের যত নিয়ামত ও রহমত রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হল এমন একটি বরকতময় রজনীকে তার বান্দাদের জন্য নসিব করা। কোরআন শরীফ বিশ্ব মানবের ইহকাল ও পরকালের সামগ্রিক কল্যাণের পথপ্রদর্শক এক সার্বজনীন, শাশ্বত ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। কোরআনের মাধ্যমেই বিশ্বজগৎ ও সৃষ্টি বৈচিত্র্যের রহস্য ও বৈজ্ঞানিক সত্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। কোরআনুল করিম নাজিল হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, এটি একটি কিতাব যা আমি আপনার কাছে বরকত হিসেবে প্রেরণ করেছি; যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা করে এবং জ্ঞানীরা তা অনুধাবন করে। প্রিয় নবী (দ.) বলেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই উৎকৃষ্ট যে নিজে পবিত্র কোরআন থেকে শিক্ষা লাভ করেছে এবং অপরকেও শিক্ষা দিয়েছে। যিনি অন্যকে কোরআন শিক্ষা দেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মর্যাদা লাভ করবেন। কোরআন মজিদের শিক্ষা মানুষকে প্রকৃত ঈমানদার করে তোলে; চরিত্রকে করে উন্নত। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে মানবিক অনুভূতির সমন্বয় ঘটিয়ে তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে। এজন্যই পবিত্র কোরআন পড়ার সঙ্গে এর মর্মবাণী অনুধাবনেরও তাগিদ দেয়া হয়েছে। কোরআনের মর্মবাণী অনুধাবন করলে মানুষ লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ, সন্ত্রাস, পাশবিকতা, ঘৃণ্য আচরণ, পরশ্রীকাতরতা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারবে। মানুষ হয়ে উঠবে গরিব-দুখীদের প্রতি দরদি ও সহানুভূতিশীল। এটিই পবিত্র কোরআনুল করিমের শিক্ষা।
আজ লাইলাতুল কদরের পবিত্র রজনীতে ইবাদতে নিমগ্ন হবেন মুসলমানরা। এই ইবাদত মানবজীবনের পাপমুক্তি ও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য অপরিসীম কল্যাণকর। আমরা মনে করি, পুণ্যময় এ রাতে আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষ মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞা করতে পারলেই সার্থক হবে এ রাতের ইবাদত। এই ইবাদত কবুল করার জন্য আমরা মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা জানাই।
হে আল্লাহ! করোনাভাইরাস মহামারী থেকে আমাদেরকে হেফাজত করো। আমাদের ও মুসলিম উম্মাহকে সব ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে হেফাজত করো। হে আল্লাহ! আমাদের তাওবা কবুল করো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে