হেলে পড়েছে চারতলা ভবন

বায়েজিদের পশ্চিম শহীদনগর ।। সরানো হলো ৬ ভবনের ১শ জনকে, তদন্ত কমিটি ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব পেয়েও কিছু অংশ ছাড়েননি ভবন মালিক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

নগরের বায়েজিদ থানার পশ্চিম শহীদনগর শীতলঝর্ণা খালের পাড়ে নির্মাণ করা একটি চারতলা ভবন পাশের ভবনে হেলে পড়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় শীতলঝর্ণা খালে প্রতিরক্ষা দেয়ালের নির্মাণ কাজ চলছে। কাজ করার সময় ২০০৫ সালে তৈয়বিয়া হাউজিং এলাকায় নির্মাণ করা খোরশেদ ম্যানসন নামে ওই ভবনটির নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় সেটি হেলে পড়ে। ভবনটিতে ফাটল দেখা গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত হননি। ভবনটিসহ আশেপাশের ৬টি ভবনের প্রায় ১০০ জন সদস্যকে সরিয়ে নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভবনগুলোতে কাউকে বসবাস না করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

এছাড়া ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালককে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, সিএমপি, ফায়ার সার্ভিস ও পিডব্লিউডির প্রতিনিধি এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্য করা হয়। ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, কমিটি প্রয়োজনে চট্টগ্রাম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করবে।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, শীতলঝর্র্ণা খালে কাজ শুরুর আগে ভবন মালিককে কিছু অংশ ছেড়ে দিয়ে ক্ষতিপূরণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। তবে ভবন মালিক মিলি কাউছার তাতে রাজি হননি। একই সঙ্গে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কাউকে দোষারোপ করবেন না বলে লিখিত দেন। এর একটি কপি আজাদীর হাতে এসেছে। এতে তিনি লিখেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে সহযোগিতা করব। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করার সময় স্থাপনার কোনো ক্ষতি হলে আমি নিজেই দায়ভার বহন করব। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী আজাদীকে বলেন, আমরা প্রটেকশন দিয়ে কাজ করছি। তার ঘরটির দেয়াল খালের শূন্য (জিরো) লাইনের ওপর নির্মাণ করা। কাজ শুরুর আগেই ভবন মালিককে জায়গা ছেড়ে (ওয়ার্কিং স্পেস) দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। ক্ষতিপূরণও দেব বলেছি। কিন্তু তিনি রাজি হননি। বরং তিনি লিখিত দিয়েছেন কাজের জন্য ভবনের কিছু হলে দায়িত্ব তার। তার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা শিট ফাইল দিয়েও প্রটেকশন দিয়েছি। কিন্তু উনার ফাউন্ডেশন যথাযথ ছিল না। আমরা কাজ করলে তার ভবনের জিরো লাইনে থাকা দুটো কলাম ফেইল করেছে এবং তার ভবনটি হেলে পড়েছে। এটা আমরা সিডিএকে জানিয়েছি। সিডিএ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

ভবন মালিক গত রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের লিখিত দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, খালের মাটি কাটার কাজ শুরুর পর আজ ভবনটি হেলে পড়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ভবন হেলে পড়ার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়। এর মধ্যে হেলে পড়া ভবনে ছিল সাত পরিবার। এছাড়া আশেপাশের পাঁচটি ভবনের সব সদস্যকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়। তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আরবান হাউজিং সোসাইটির প্রফেসর হুমায়ুন ইসলামিক একাডেমি, পশ্চিম শহীদ নগরের মীর আহম্মদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব শহীদ নগরের তৈয়বীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ হারুন পাশা আজাদীকে বলেন, হেলে পড়া ভবনে সাতটি পরিবার ছিল। তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। এটি দেবে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পাশের ভবনগুলোও ঝুঁকিতে আছে। তাই আরো পাঁচটি ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। ভবনগুলোর প্রতি ফ্লোরে ২টি করে ইউনিট আছে।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী মোহাম্মদ তানভীরুল আজম সাংবাদিকদের বলেন, খালের পাশে থাকা খোরশেদ ম্যানসন নামের চারতলা ভবনটি পাশের তাহেরিয়া ম্যানসনের ওপর হেলে পড়ে। হেলে পড়া খোরশেদ ম্যানসনে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। আর তাহেরিয়া ম্যানসন ছয়তলা। এছাড়া জমির সাহেবের ভবন নামের দোতলা ভবনও ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনটি ভবনের সব বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব ভবনে অন্তত ১৫টি পরিবার বসবাস করত।

উল্লেখ্য, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ চলার সময় ১৮ জানুয়ারি ষোলশহরে একটি চারতলা ভবন, ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর রাতে মাদারবাড়ি এলাকায় খালের পাশের দুটি ভবন, একটি মন্দির ও একটি কাঁচাঘর হেলে পড়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ আজ থেকে
পরবর্তী নিবন্ধজাখারোভোর বিবৃতি বাংলাদেশিদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে : বিএনপি