বিলে, মাঠে ফল–ফসলের পুষ্ট ঘ্রাণে বাতাস হয় পুলকিত। সাঁঝ, সকালে হিম হিম আমেজ। কুয়াশার চাদর সরিয়ে ফোটে আলো। আভা ছড়িয়ে দেয় দিগন্তে, পুরো ধরণীতে। শহুরে জীবনে হেমন্তের দেখা! মিলে, মিলতে পারে। যদি ভোর, সাঁঝে পাখপাখালির ব্যস্তময়তা, রঙ্গনে অসাড়তা, কাশঝাড়ের ঝিম ধরা গানের প্রতি দৃষ্টি দেই। প্রাণহীন কাশের নির্জীবতা, নেই তার বায়ুর সাথে সখ্যতা।
পেঁজাতুলো মেঘেরা ঠিকানবিহীন। তার জায়গায় শুধু ঘননীলের উপস্থিতিই নিভৃতচারী হেমন্ত প্রকৃতির কথা বলে আমাদের।
হাটে বাজারে নতুন শস্য, ফল–ফসলেরউপস্থিতি, সতেজতা প্রচুর্য্যে ভরা নতুন ফল– সব্জি সম্ভার মানেই বাংলার হেমন্তকাল। হৈমন্তী ঘ্রাণে মেতে ওঠে পথঘাট, মাঠে পাকা ফসলের সোনারঙা রূপ। পুষ্টতা আর প্রাচুর্যতায় মিলেমিশে একাকার বাঙালি জীবন। কবি বলে গেছেন ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’। তিনি কি শরৎ ঋতুকে কল্পনা করে এ কথামালাগুলো বলেছিলেন? হয়তোবা। নতুন ফসল মানে ঘরে ঘরে ‘নবান্ন উৎসবে’ মেতে ওঠার আয়োজন। নতুন চাউলের ফিরনী রেঁধে মিলাদ হবে। পিঠেপুলি গড়া হবে পূজোর আয়োজনে। হবে আতিথেয়তার মতো খুব বড়ো কোনো আয়োজন। কিন্তু নগরায়নের ভীড়ভাট্টায় অসব সম্প্রীতির বন্ধনের দেখা আদৌ মিলে কি? তবু চিরায়ত এই বঙ্গতটের রূপ জৌলুসের সাথে না মিলতে পারলে, দু’টো কথা কইতে না পারলে মন কি ভরে বিন্দাস এই অবসরে?
কার্তিক আর অগ্রাহায়ণ দু’টো বাংলা মাস আমাদের বাংলাদেশের একান্ত নিজস্ব। আমাদের স্বকীয়তা আর বাংলা সন গুলোতে বিভিন্ন ঋতুর যে প্রাচুর্য, ওদার্য, গম্ভীরতা সর্বোপরি রূপ সুষমা আর এসব ঘিরে পালা পার্বন হারিয়ে যেতে বসেছে।
কারো হাতে এতটুকু সময় কি আছে, একটু দাঁড়াবার? ব্যস্ততার মাঝে একটু থামার? ক্ষণিক থেমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনে চোখ ও মনকে স্বস্তি দেয়ার?
তাই মাঝে মাঝে নিজকে বলি,‘শুধু ছুটে চলা জীবন নয়, একটু থামো আশপাশটা দেখো, এরপর আবার চলো নিজ গন্তব্যে।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘রাখাল ছেলে’ কবিতাটিতে রাখাল ছেলের শত কাজের ভীড়ে একটু থামার আকুতি ফুটে উঠে। কাজের ফাঁকে একটু থামার যে আকুতি, সেটিই এখন কাঙ্ক্ষিত মনে হয় জীবনে। তাই কবির সাথে সুর মিলিয়ে বলি, ‘রাখাল ছেলে রাখাল ছেলে বা’রেক ফিরে চাও, বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও ?
ওই যে দূরে নীল নোয়ানো সবুজ ঘেরা গাঁ, কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা।’
কাজের মাঝে একটু বিরতি নিন আর মনোহর অথচ নিভৃতচারী ঋতু হেমন্তকে জীবনের সাথে মিলিয়ে নিয়ে উপভোগ করুন এই ঋতুর প্রাচুর্য ও স্নিগ্ধতা।












