বাংলা সংগীতের জগতে হেমাঙ্গ বিশ্বাস এক অবিস্মরণীয় নাম। গণজাগরণমূলক গান গেয়ে তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। এ ধরনের বহু গানের রচয়িতা এবং সুরকারও তিনি। এইসব নানাবিধ পরিচয়ের অন্তরালে সুপ্ত থেকে গেছে তাঁর কবির প্রতিমূর্তি। তাঁর অনেক কবিতাই সুরের মূর্ছনায় গান হয়ে উঠেছে। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্ম ১৯১১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। তিনি ছিলেন বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী। বেশ কিছুকাল ‘সোভিয়েত দেশ’ পত্রিকায় কাজ করেছেন। তাঁর রচিত গানে মেহনতী-শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-বেদনা আর শোষকের অত্যাচার নিপীড়নের বিমূর্ত চিত্র ফুটে উঠেছে। সেই সাথে আছে প্রতিবাদ, আছে স্বপ্ন জয়ের আশা। আর সবকিছু ছাপিয়ে অসাধারণ সুরের কারুকাজে গানগুলো হয়ে উঠেছে এক-একটি কাব্য। বুর্জোয়া প্রথা-প্রতিষ্ঠানের কাছে কখনোই নতজানু হননি হেমাঙ্গ বিশ্বাস। চল্লিশের দশকের মধ্যভাগে তিনি ফুঁসে উঠেছিলেন সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জনে। তেভাগা আন্দোলনে তাঁর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ গণসংগীত কৃষকদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের আগুনে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। তাদেরকে অনুপ্রাণিত করে সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে।
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘জন হেনরির গান’, ‘শঙ্খচিলের গান’, ‘ফুলগুলি কোথায় গেল’, ‘তোমার কাস্তেটারে দিও জোরে শান’, ‘তোর সোনার ধানে বর্গী নামে’, ‘মাউন্টব্যাটেন মঙ্গলকাব্য’ প্রভৃতি। তীর, লাল লণ্ঠন, কল্লোল সহ বেশ কিছু নাটক এবং লালন ফকির নামের একটি চলচ্চিত্রে সুর যোজনার কাজ করেছেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। ‘মাস সিঙ্গার্স’ নামে একটি গানের দল তৈরি করেছিলেন তিনি। এই দল নিয়ে গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে ঘুরে গান গেয়েছেন সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করতে। ১৯৮৭ সালের ২২শে নভেম্বর নিবেদিতপ্রাণ এই সংগীত স্রষ্টার জীবনাবসান ঘটে।