হেফাজতের নামে কমিটি হলে তা প্রত্যাখানের ঘোষণা শফিপন্থীদের

‘বাবুনগরী হেফাজতকে ভুলপথে ঠেলছেন’

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৩ জুন, ২০২১ at ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

হেফাজতের নামে কোনো কমিটি হলে তা প্রত্যাখানের ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির প্রয়াত আমির আহমদ শফীর অনুসারীরা। গতকাল বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এই ঘোষণা দেন। ‘শায়খুল হাদিস আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) এর ভক্তবৃন্দ’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সাবেক সাহিত্য সম্পাদক মাওলানা নুরুল ইসলাম জাদিদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, যারা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর হত্যা মামলার স্বীকৃত আসামি তারা হেফাজতের কর্ণধার থাকতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আহমদ শফীর রেখে যাওয়া আমানত হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। অচিরেই শীর্ষস্থানীয় ওলামাদের পরামর্শে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, হেফাজতের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরী নিয়ম বহির্ভূতভাবে আহ্বায়ক কমিটি করে আলেম-উলামাদের নতুন করে ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেলতে চাইছেন। নুরুল ইসলাম বলেন, জীবনের শেষ মুহূর্তে মুমূর্ষু অবস্থায় আল্লামা আহমদ শফীকে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি, রুমের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, এসি-ফ্যানসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছিল। তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, চাপাতি, রামদা, লাঠি, দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত চরম ও উগ্রপন্থীদের দিয়ে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। হাটহাজারী মাদ্রাসায় একটি চরমপন্থি উগ্রগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সহজ-সরল ছাত্রদের উস্কানি দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, জুনাইদ বাবুনগরী গতবছর ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তার সেই দাবিকে মিথ্যাচার আখ্যায়িত করে নুরুল ইসলাম জাদিদ বলেন, আহমদ শফীর চরম বিরোধী ও বিদ্বেষীদের দ্বারা যিনি হেফাজতের কথিত আমির হয়েছিলেন, তাকে এদেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ মেনে নিতে পারেনি। যে কারণে তিনি জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য তথাকথিত ওই অবৈধ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা মনে করি, কথিত হেফাজত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি পকেট কমিটি গঠিত হয়েছিল। যেখানে আহমদ শফির মূল অনুসারী হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা নেতৃবৃন্দকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। গঠনতন্ত্রে না থাকলেও এককভাবে তিনি (বাবুনগরী) নিয়ম বহির্ভূত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে নতুনভাবে আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে নিপতিত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। জাদিদ বলেন, এটি হেফাজতের কোনো আহ্বায়ক কমিটি নয় বরং মামা-ভাগ্নের ফটিকছড়ি পকেট কমিটি। অচিরেই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে হেফাজতে ইসলামের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব জেলা, থানা, শহর ও নগর কমিটিগুলো নবায়ন করে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করার কথা বলা হয় শফীপন্থিদের এ সংবাদ সম্মেলনে।
মাওলানা জাদিদ বলেন, আজ মাহফিল বন্ধ, মাদ্রাসাগুলো বন্ধ ও সরকারি নজরদারির আওতায়, আন্দোলনের নামে নিজেদের নেতা হওয়ার খায়েশে ইসলামকে আজ বিপদের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ আহমদ শফীও আন্দোলন করেছেন। আবার তিনি স্বকীয়তা বজায় রেখে সরকারের কাছ থেকে ইসলামের অনেক দাবি-দাওয়া আদায় করে দেশের মুসলমানদের মাথা উঁচু করেছেন। তিনি কারো কাছে মুচলেকা দিয়ে আন্দোলনের ভূমিকাকে কোনোকালেই খাটো করেননি। আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের নাম এসেছে, অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির নায়েবে আমির মধুপুরের পীর মওলানা আবদুল হামিদ, মুফতি নুরুল আমিন ও রুহুল আমিন খান, আহমদ শফীর ছোট ছেলে আনাস মাদানি, আহমদ শফীর শ্যালক মো. মহিউদ্দিন, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দীন রুহী, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসানাত আমিনী, আলতাফ হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবু কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধ২০ লাখ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স ও ফি আদায়