চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগে বিভাগে আগামী মাসে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি এনজিওগ্রাম মেশিন। বর্তমানে গত তিন বছর ধরে একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে চলছিল হৃদেরাগ বিভাগের কার্যক্রম। গত ২০২১ সালের শেষের দিকে অপর একটি এনজিওগ্রাম মেশিনের পিকচার টিউব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেবা পেতে রোগীদের ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। হৃদরোগ চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক গরীব রোগী টেমপোরারি পেস মেকার (টিপিএম), পার্মানেন্ট পেস মেকার (পিপিএম), এনজিওগ্রাম ও রিং স্থাপন করতে পারেনি। এর মধ্যে নষ্ট এনজিওগ্রাম মেশিনটি মেরামতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বারবার ধর্ণা দিয়ে সুফল মেলেনি। অবশেষে হৃদরোগ বিভাগে এনজিওগ্রাম মেশিন সংকটের সমাধান হচ্ছে। ফলে কাজের গতিও দ্বিগুণ হবে বলছেন চিকিৎসকরা।
হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, ক্যাথল্যাব বা কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশনের (এনজিওগ্রাম) মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি, ভাল্ব (কপাটিকা), ধমনির পরিস্থিতি জানতে এবং হৃদযন্ত্রের রক্তের চাপ বুঝতে রোগীকে ক্যাথল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ত্রুটি ধরা পড়লে প্রয়োজন মতো রক্তনালিতে রিং পরানো, পেসমেকার বসানো, সংকুচিত ভাল্বকে ফোলানোসহ বিভিন্ন অস্ত্রোপাচার করা হয়।
জানা গেছে, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় চট্টগ্রামে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি। হৃদরোগের চিকিৎসায় উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারত, সিঙ্গাপুর ব্যাংককসহ বিশ্বের উন্নত দেশে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতাল। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের কয়েক কোটি মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল।
হৃদরোগ বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, বর্তমানে জাপানের শিমার্জু ব্র্যান্ডের একটি মেশিন দিয়ে টিপিএম, পিপিএম, এনজিওগ্রাম, পেরিপাইরাল এনজিওগ্রাম ও রক্তনালীতে রিং স্থাপনের কাজ চলছে। অতিরিক্ত চাপের কারণে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ মেশিনটি বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে মেশিনটির সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা পিকচার টিউব স্থাপন করে সচল করে। এছাড়া অপর নষ্ট মেশিনটি সচল করার জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জানায়–মেশিনটি মেরামত করতে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূর উদ্দিন তারেক দৈনিক আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগে বর্তমানে একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। এতে মেশিনটির ওপর চাপ বাড়ছে। কারণ আমাদের বিভাগে যে পরিমাণ ভর্তি রোগী সে অনুপাতে একটি মেশিন কোনোভাবে যথেষ্ট নয়। গত তিনবছর ধরে অপর একটি মেশিন নষ্ট পড়ে আছে। তাই আমাদের কাজের গতিও কমে যায়। তবে এখন আগামী মাসে হৃদরোগ বিভাগে আরেকটি এনজিওগ্রাম মেশিন যুক্ত হলে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে। এতে আরো বেশি রোগী সেবা পাবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের জন্য আরেকটি মেশিন আসছে। মেশিনটি আগামী মাসে চলে আসবে। এটি স্থাপিত হলে হৃদরোগ বিভাগের সক্ষমতা বাড়বে। কাজের গতি দ্বিগুণ হবে।