উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোনে লক্ষণ থাকে না। তাই উচ্চ রক্তচাপে ভোগা অনেক রোগী জানেই না, তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ, দৃষ্টিতে পরিবর্তন এবং কানে গুঞ্জন অনুভূতির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অত্যাধিক উচ্চ রক্তচাপ ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, বমি, বিভ্রান্তি, উদ্বেগ, বুকে ব্যথা এবং পেশি কম্পনের কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ৪৫ শতাংশই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ৩০–৭৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর ১ দশমিক ৪ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, যার দুই–তৃতীয়াংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জনগণ। বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন। আর এই সমস্যায় স্ট্রোক ও হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে ভুগে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। রক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে যায় তাহলে উচ্চ রক্তচাপ হয়। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই হচ্ছে অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ হৃদরোগে মারা যান। উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে হৃদরোগের প্রধান কারণ। এমন পরিস্থিতিতে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস।
চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন একজন মানুষের ৫ গ্রাম লবণ খাওয়া দরকার। তবে দেখা যায় লবণ গ্রহণের মাত্রা কয়েক গুণ বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ দৈনিক ৯ থেকে ১১ গ্রাম লবণ ব্যবহার করেন। শুধু ভাত–তরকারিতে নয়, না জেনে বাইরের খাবার থেকেও শরীরে ঢুকছে মাত্রাতিরিক্ত লবণ। যে কারণে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ছে। তাছাড়া অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও তেলজাতীয় খাবার গ্রহণ এবং স্থূলতাও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির কারণ। তবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ১৮ বছর বয়স থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর প্রত্যেক ব্যক্তিকেই একবার করে রক্তচাপ মাপা উচিত। এতে যদি তার উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে এবং শুরুতেই সে জানতে পারে, তাহলে জীবন যাপন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সাবেক প্রধান ও বাংলাদেশ হাইপারটেনশন অ্যান্ড হার্ট ফেইলিউর ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ দৈনিক আজাদীকে বলেন, উচ্চ রক্তচাপ প্রায় ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ ছাড়া চলতে থাকে এবং স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, হৃৎপিন্ডের ছন্দহীনতা, কিডনী রোগ, স্মৃতিশক্তি বিলোপসহ শরীরের রক্তনালীর বিভিন্ন অসুখ সৃষ্টি করে। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে খাদ্যে লবণের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। লবণযুক্ত খাবার যেমন, ফাস্টফুড, চিপস, চানাচুর ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার কমাতে হবে। রান্নার তেল সীমিত করতে হবে। শাক সবজি, ফলমূল, শস্য জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। মেদ বাহুল্য পরিহার করতে হবে। শরীরের আদর্শ ওজন বজায় রাখা জরুরি। ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি দৈনিক কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে হবে।
এদিকে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে আজ সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু’তে বাংলাদেশ হাইপারটেনশন অ্যান্ড হার্ট ফেইলিউর ফাউন্ডেশন এবং চট্টগ্রাম সোসাইটি অব ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির উদ্যোগে বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করেছে। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সাবেক প্রধান ও বাংলাদেশ হাইপারটেনশন অ্যান্ড হার্ট ফেইলিউর ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ, চট্টগ্রাম সোসাইটি অব ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির সভাপতি ও চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশীষ দে এবং চমেক হাসপতাল হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চট্টগ্রাম সোসাইটি অব ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির সাধারণ সম্পাদক ডা. আনিসুল আউয়াল।