সুপার ফোরে পাকিস্তানের কাছে হারের পর শ্রীলংকায় এসে বাংলাদেশ আবারো হারলো স্বাগতিকদের কাছে। আর তাতে করেই বাংলাদেশ কার্যত বিদায় নিল এশিয়া কাপ থেকে। গতকাল শনিবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ২১ রানে হার মানে শ্রীলংকার কাছে।
গতকাল বাংলাদেশ তাদের ইনিংসে যখন ৪২ বলে আর ৬৮ রান দরকার, তখনও জয়ের আশা দেখছিল। ক্রিজে ছিলেন তাওহীদ হৃদয়। খানিক পর তিনি বিদায় নিতেই আশা অনেকটাই শেষ হয়ে যায়। লংকানদের বিপক্ষে ম্যাচটিতে একজন ব্যাটার কম নিয়ে নেমেছিল সাকিবরা। আফিফ হোসেনকে বসিয়ে একাদশে যোগ করা হয় স্পিনার নাসুম আহমেদকে। সেই নাসুম নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে শ্রীলংকার রান তাড়ায় শেষদিকে ব্যাটিংয়ে নাটকীয় কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বাউন্ডারিজুড়ে লঙ্কান ফিল্ডারদের ফাঁকি দেওয়ার জন্য ৯ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
সেটি যথেষ্ট ছিল না। শেষমেষ নাসুমের চেষ্টা থামে মাথিশা পাথিরানার ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে। বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ২৩৬ রানে। টাইগারদের হয়ে ৯৭ বলে সর্বোচ্চ ৮২ রানের ইনিংস খেলেন তাওহীদ হৃদয়। তিনি ৭টি চার ও একটি ছক্কা দিয়ে ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন। বাংলাদেশের আশা হৃদয়কে নিভিয়ে দেন মাহিশ থিকশানা। তার সঙ্গে শামীম পাটোয়ারীও ছিলেন কিছুক্ষণ। বড় শট খেলার সামর্থ্য আছে তার। কিন্তু আজ প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পারলেন না। রানের গতি বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল যখন, তখন উইকেটে এসে ১০ বলে ৫ রান করে উল্টো দলের বিপদ বাড়িয়েছেন। মুশফিকুর রহিম ২৯, মেহেদী মিরাজ ২৮ ও নাঈম শেখ করেছেন ২৫ রান। শেষদিকে আউট হওয়ার আগে নাসুম আহমেদ করেছেন ১৫ বলে ১৫ রান। এছাড়া হাসান মাহমুদের ব্যাট থেকে আসে ১০ রান। লঙ্কানদের হয়ে তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন মহেশ থিকশানা, পাথিরানা ও দাসুন শানাকা।
এর আগে শ্রীলংকার দেওয়া ২৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালোই করেছিলেন দুই ওপেনার মিরাজ ও নাঈম। বিশেষ করে মিরাজ দ্রুতই নিজেকে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলেন। পাওয়ার প্লের সুবিধা নিয়ে ফাঁকা জায়গা দিয়ে দারুণ কিছু শট খেলেছেন। প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৭ রান তোলে বাংলাদেশ। এর পরের ওভারেও পাথিরানাকে দারুণ এক ফ্লিকে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন মিরাজ। এমন শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ১২তম ওভারের প্রথম বলটি খাটো লেন্থে করেছিলেন শানাকা। নিচু হয়ে আসা সেই বলে পুল করেই যেন ভুল করেন মিরাজ। মিডউইকেটে সফট ডিসমাল হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৯ বলে ২৮ রান। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে ফিরেছেন নাঈম, সাকিব ও লিটন। শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ভুগছিলেন নাঈম। পাওয়ার প্লেতে মিরাজ এক প্রান্তে রানের চাকা সচল রাখার কারণে খুব একটা চাপে ছিল না দল। তবে মিরাজ ফেরার পর সেই চাপের ভার আর বইতে পারেননি এই ওপেনার। ১৪তম ওভারে শানাকার বাউন্সারে অযথা শট খেলতে গিয়ে ২১ রানে উইকেটটা বিলিয়ে দিলেন। সেই চাপ সামলাতে এসে বিপদ বাড়িয়ে সাজঘরে ফিরেছেন ৩ রান করা সাকিবও। ২৪ বলে ১৫ রানে শেষ লিটনের ইনিংস। দুনিথ ভেল্লালাগের অফ স্টাম্পের বাইরে ঝুলিয়ে দেওয়া বলে তিনি কিপারের তালুবন্দী হন। সতীর্থদের এমন যাওয়া আসার মিছিলে এক প্রান্তে একাই লড়ছেন হৃদয়। তবে ফিফটি পেতে তিনি খরচ করেছেন ৭৩ বল। এর আগে তার সঙ্গে মুশফিকের জুটি আশা জাগালেও বেশিক্ষণ সেটি টিকেনি। ২৯ রানে বিদায় নেন মুশি। এরপর আসা–যাওয়ার সেই মিছিল থামে ২৩৬ রানে।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায় শ্রীলংকাকে। তারা ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান তোলে। ষষ্ঠ ওভারের শুরুটা হয়েছিল টানা দুই বাউন্ডারিতে। তবে তৃতীয় বলে উইকেট শিকার করে সেটার প্রতিশোধ নেন হাসান মাহমুদ। ব্যাকঅব লেন্থ থেকে খানিকটা আউট সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে ছিলেন দিমুথ করুণারত্নে। ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে বল চলে যায় মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ১৮ রান করে এই ওপেনার সাজঘরে ফেরায় ভাঙে ৩৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। ইনিংসের নবম ওভারে প্রথমবার স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। সাকিব নিজেই বল হাতে তুলে নেন। পরের ওভারে অপর প্রান্ত থেকেও স্পিন আক্রমণে যান সাকিব। এবার বল হাতে নাসুম আহমেদ। দুই স্পিনারই পাওয়ার প্লেতে একটি করে ওভার করেছেন। তাদের দুর্দান্ত শুরুতে ১ উইকেটে ৫১ রান তুলে প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ করে শ্রীলংকা। বাংলাদেশের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে ওঠা নিশাঙ্কা শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে। শরিফুলের স্লোয়ারে ব্যাট নামাতে দেরি করে ফেলেন তিনি। বল পায়ে আঘাত হানলে আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু পল উইলসনের দেওয়া এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ করেছিলেন, তবে বাঁচেননি। ৭৪ রানের জুটি অবশেষে ভাঙেন শরিফুল। নিশাঙ্কা থেমেছেন ৬০ বলে ৪০ রান করে। নিশাঙ্কা হাফ সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন কুশল মেন্ডিস। তবে এরপর আর বেশি দূর এগোতে পারেননি। শরিফুলের খাটো লেন্থের বলে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন। এর আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৩ বলে ৫০ রান। দুই সেট ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশকেও ম্যাচে ফেরান শরিফুল। চারিথ আসালঙ্কা উইকেটে আসার পরই শরিফুলকে সরিয়ে তাসকিনকে আক্রমণে আনেন সাকিব। অধিনায়কের সেই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন করেন ডানহাতি এই পেসার। তাসকিনের স্লোয়ারে তুলে মারতে চেয়েছিলেন আসালঙ্কা। কিন্তু টাইমিং হয়নি। মিড অনে থাকা সাকিব তার ডানদিকে ছুটে নিয়েছেন ভালো ক্যাচ। আসালাঙ্কা থেমেছেন ২৩ বলে ১০ রান করে। আসালাঙ্কা দ্রুত ফেরার পর ধানাঞ্জয়া ডি সিলভার কাঁধে অনেক দায়িত্ব ছিল। তবে তিনিও সামাবিক্রমাকে সঙ্গ দিতে পারেননি। ৩৭তম ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেন্থে করেছিলেন হাসান। সেখানে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ৬ রান। এরপর দাসুন শানাকাকে সঙ্গে নিয়ে ভালোই লড়াই করেছেন সামাবিক্রমা। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের জুটিতে বড় সংগ্রহের দিকেই এগোচ্ছিল শ্রীলংকা। ২৪ রান করা শানাকাকে বোল্ড করে ৬০ রানের সেই জুটি ভাঙেন হাসান। তাতে আরও একবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় টাইগাররা। বাংলাদেশের সঙ্গে আগের ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সামাবিক্রমা। এবার আরও একবার বাংলাদেশকে পেয়ে জ্বলে ওঠলেন তিনি। খানিকটা চাপ নিয়েই উইকেটে এসেছিলেন। সেখানে দাঁড়িয়েও খেলেছেন দারুণ কিছু শট। হাফ সেঞ্চুরি ছুঁতে খরচ করেছেন মাত্র ৪৫ বল। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে তিনি নামের পাশে যোগ করেছেন ৭২ বলে ৯৩ রান।
বাংলাদেশের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন হাসান–তাসকিন। এই দুই পেসারই ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন। তাছাড়া সাকিব–নাসুম উইকেট শূন্য থাকলেও মিতব্যায়ী বোলিং করেছেন। বাংলাদেশ তাদের পরের ম্যাচটি খেলবে ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের বিপক্ষে।