হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭–২০০৪)। কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক, এবং অধ্যাপক। তিনি একজন প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক। স্রোতের প্রতিকূলে চলা সত্য ভাষ্যের এক অনন্য পথিক হুমায়ুন আজাদ। হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ই এপ্রিল বিক্রমপুরের রাড়িখালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবদুর রাশেদ মা জোবেদা খাতুন। মা বাবার দেয়া নাম হুমায়ুন কবির। তিনি রাড়িখাল স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক (১৯৬২), ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯৬৭) ও স্নাতকোত্তর (১৯৬৮) এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা করে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনার মধ্যদিয়ে তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন। পরে তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১লা নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্য ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ এবং প্রবন্ধগ্রন্থ রবীন্দ্রপ্রবন্ধ: ‘রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা’। এ সময় তিনি ভাষাবিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি কবিতা লেখাতেও মনোযোগ দেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘জ্বলো চিতাবাঘ’। তাঁর ভাষাতত্ত্ব বিষয়ক তিনটি গ্রন্থ যথা, ‘বাংলা ভাষার শত্রুমিত্র’ (১৯৮৩), ‘বাক্যতত্ত্ব’ (১৯৮৪)। তাঁর ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক দুটি গ্রন্থ, ‘তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান’ (১৯৮৮), ‘অর্থবিজ্ঞান’ (১৯৯৯) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তাঁর বেশকিছু প্রবন্ধগ্রন্থ ও উপন্যাস রয়েছে। হুমায়ুন আজাদ যেমন লিখেছেন বড়দের জন্য তেমনি লিখেছেন শিশু–কিশোরদের জন্যও। ’লাল নীল দীপাবলি’ (১৯৭৬), ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’ (১৯৮৫), ‘কতো নদী সরোবর’ (১৯৮৭), ‘আব্বুকে মনে পড়ে’ (১৯৮৯), ‘বুকপকেটে জোনাকিপোকা’ (১৯৯৩), ‘আমাদের শহরে একদল দেবদূত’ (১৯৯৬), ‘অন্ধকারে গন্ধরাজ’ (২০০৩) প্রভৃতি। তিনি ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মরণোত্তর একুশে পদকসহ অনেক পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।