হিসাবরক্ষকসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

জেনারেল হাসপাতালে আর্থিক জালিয়াতি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১ জুলাই, ২০২২ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল ছাড়করণের চেষ্টার ঘটনায় অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দিয়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দুদক, চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাতের হাতে এ অভিযোগ তুলে দেন জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

লিখিত অভিযোগে চার জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হলেন- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুন্সি ফারুক, একই প্রতিষ্ঠানের সাজ্জাদ হোসেন ও মুকিত মণ্ডল। বিলের অর্থ ছাড়করণে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে অভিযোগে। এ তথ্য নিশ্চিত করে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, জালিয়াতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগপত্রে আমরা অনুরোধ করেছি। বিষয়টি এখন দুদক দেখবে।

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে দুদক, চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা অভিযোগটি গ্রহণ করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবো। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এর আগে জালিয়াতির এ ঘটনায় জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকানকে সকল ধরনের আর্থিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার এ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। এছাড়া বুধবার এক অফিস আদেশে মো. ফোরকানের স্থলে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিনকে হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। নাছির উদ্দিন নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করবেন বলে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া জালিয়াতির এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর। গত ২৯ জুন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কমিটি গঠনের এ তথ্য জানানো হয়। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. সাখাওয়াত উল্ল্যাহকে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীকে। আর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সুমন বড়ুয়াকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করে তিন সদস্যের এই কমিটিকে তদন্ত পূর্বক তিন কর্মদবিসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।

প্রসঙ্গত, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেটে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ হতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক সরবরাহকৃত ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি ভেন্টিলেটর ও ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটরের বকেয়া বিল বাবদ ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার ব্যয় মঞ্জুরি আদেশ জালিয়াতির মাধ্যমে ছাড়করণের চেষ্টা হয়। মঙ্গলবার জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকান এ বিল ছাড়করণের চেষ্টা চালান। বিষয়টি ধরা পড়ায় বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে মো. ফোরকানকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরে তাকে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন অর্থবছরের বাজেট পাস
পরবর্তী নিবন্ধসমালোচকরা বাংলাদেশের জনগণের সক্ষমতা সম্পর্কে জানেন না