হিমাগার নেই, লোকসানে সীতাকুণ্ডের সবজি চাষিরা

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | শনিবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ড পৌরসদরের সদরের মৌলভীপাড়া এলাকার কৃষক জসিম উদ্দিন এবার ৪৮০ শতক জমিতে শিম চাষ করছেন। আশানুরূপ ফলনও হয়েছে। কিন্তু বেশি দিন রাখলে পচে যায় বলে প্রতি কেজি শিম ৩০ টাকা দরে বেচে দিয়েছেন তিনি। ৬২০ কেজি শিম এই দামে বিক্রি করায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাকে। অথচ বাজারে কিছুদিন আগেও ৫০ থেকে ৭০ টাকায় শিম বিক্রি হয়েছে। বছরের কোনো কোনো সময় ১০০ টাকার ওপরেও ওঠে শীতের এই সবজির দাম।

গতকাল শুক্রবার সকালে সীতাকুণ্ড মোহন্তের হাটে সবজি বাজারে তার সঙ্গে কথা হয়। জসিম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, হিমাগার থাকলে ভরা মৌসুমে এভাবে সবজির দাম পড়ে যেত না। সারা বছরই শিম বিক্রি করে লাভ করতে পারতেন তিনি। শুধু জসিম উদ্দিন নয়, পুরো উপজেলার আরও ১৮ হাজার ৫৪০ জন সবজি চাষি এখন সস্তায় নানা ধরনের শীতের সবজি বিক্রি করে দিচ্ছেন। টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি কম দামে বেচে দিতে হয়। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এখন শিম, বরবটি, ফুলকপি, শসা, টমেটো, লাউসহ অন্যান্য সবজির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকায় নেমে এসেছে। কৃষিপ্রধান এই উপজেলায় হিমাগার না থাকায় পচনশীল কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করতে পারছেন না কৃষকেরা। ফলে এখানকার অনেক কৃষকই উৎপাদিত সবজি বিক্রি চাষের খরচ তুলতে পারেন না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় তালিকাভুক্ত সবজি চাষি রয়েছেন ১৮ হাজার ৫৪০ জন। এ বছর পাহাড়ি ও সমতল মিলিয়ে দুই হাজার হেক্টর জমিতে মিশ্র সবজি ও ২ হাজার ৫০০ হেক্টরে শুধু শিম চাষ হয়েছে।

সীতাকুণ্ড মোহন্তের হাটে আসা কৃষক রফিক আহম্মদ বলেন, তিনি এবার ৮০ শতক জমিতে ক্ষীরার চাষ করেছেন। এখন প্রতি কেজি ২২ টাকা দরে বেচে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ টাকায় সবজি বিক্রি করায় ক্ষতি হচ্ছে তার। উপজেলার আরেক সবজির বাজার বাড়বকুণ্ডের শুকলালহাটেও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানেও বেশির ভাগ সবজি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় সাংসদ দিদারুল আলম তার নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি হিমাগার স্থাপনের ঘোষণা দিলেও গত ৫ বছরে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি।

এ প্রসঙ্গে সীতাকুণ্ড আসনে নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য এস এম আল মামুন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি। আর সীতাকুণ্ড হবে কৃষির অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র। সীতাকুণ্ডের শিম দেশে ছেড়ে বিদেশে ও রপ্তানি হচ্ছে। হিমাগার সীতাকুণ্ডের কৃষকদের জন্য খুবই প্রয়োজন। তাই বিষয়টি তিনি সংসদে তুলবেন বলে জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, সীতাকুণ্ডের কৃষকেরা কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম পান না হিমাগারের অভাবে। ভরা মৌসুমে সবজি না বেচে সংরক্ষণ করা গেলে কৃষকেরা লাভবান হতেন। তখন সারা বছর আয় করার সুযোগ পেতেন। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমে যেত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন এ ধরনের কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তোলায়
পরবর্তী নিবন্ধপেকুয়ায় জলমহালের একাংশে বাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের