চৌদ্দ বছর আগে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী কিশোরী ফেলানী খাতুনকে হত্যার ঘটনায় বিচারের উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার বাবা নূর ইসলাম। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার আমলে তাকে ‘এত চাপে’ রাখা হয়েছিল যে, মেয়ের বিচারের কথাও তিনি বলতে পারেননি।
সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এক সমাবেশে কথা বলছিলেন নূর ইসলাম। শিক্ষার্থীরা এদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান সড়কগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মিলিত হন। সেখানে প্রতীকী সীমান্ত বানিয়ে তারা বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজের। সমাবেশে নূর ইসলাম বলেন, পাখির মতো গুলি করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখেছিল আমার মেয়ে ফেলানীকে। আমার সামনে পানি পানি বলে চিৎকার করেছিল। বিএসএফ কিছু করতে দেয় নাই। কাঁটাতারে পাঁচ ঘণ্টা ঝুলিয়ে রেখে নির্মমভাবে হত্যা করেছে আমার মেয়েকে। আমি কতবার বিচারের জন্য গিয়েছি। আমাকে শুধু আশ্বাস দিয়ে রেখেছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আমাদের এত চাপে রেখেছে, কোনদিন এ বিষয়ে কথাও বলতে দেয় নাই। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বিয়ের উদ্দেশে ভারত থেকে বাবার সঙ্গে দেশে ফেরার পথে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী। ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে চার ঘণ্টার বেশি সময় ঝুলে ছিল। মর্মস্পর্শী এই দৃশ্য তখন সারাবিশ্বেই সমালোচনা তৈরি করে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম এক সময় দিল্লিতে কাজ করতেন। তার সঙ্গে সেখানেই থাকত ফেলানী। দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বাবার সঙ্গে দেশে ফিরছিল পঞ্চদশী মেয়েটি। সীমান্ত পার হওয়ার সময় কাঁটাতারের বেড়ায় তার কাপড় আটকে যায়। এতে ভয়ে সে চিৎকার দিলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ নিয়ে যায়। ওই হত্যাকাণ্ডে দেশ–বিদেশের গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার কর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠলে ২০১৩ সালের ১৩ অগাস্ট কোচবিহারে বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়। কিন্তু পরে ভারতীয় আদালত অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বিচারের দাবি জানিয়ে ফেলানীর বাবা বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত করে যেভাবে আমার মেয়েকে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে, হত্যাকারীকেও যেন সেভাবে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে বিচার করা হয়। আর যেন সীমান্ত হত্যাকাণ্ড না হয়। আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।
তিনি বলেন, ভারতের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা হবে। সবাই ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।