সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই–আগস্টের গণহত্যার মামলায় ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি সাবেক মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে এ আদালত।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল সোমবার এ আদেশ দেয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। খবর বিডিনিউজের।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জুলাই–আগস্টে নিপীড়নের পটভূমি পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষ করার জন্য দুই মাস সময় প্রয়োজন। পরে ট্রাইব্যুনাল এক মাস সময় দিয়ে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তাজুল ইসলাম তখন বলেন, এর মধ্যেই তারা তদন্ত শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। বাকি যে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা ১৪ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শাহজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে সকালে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। আর সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় আরেক সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে এদিন আদালতে হাজির করা হয়নি।
শুনানির শুরুতে তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, আসামিপক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী শুনানি করতে এসেছেন। তবে তিনি রাষ্ট্রীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে যাচ্ছেন বলে জেনেছি। দুয়েকদিনের দিনের মধ্যে হয়ত সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করবেন। তাই তিনি আসামিপক্ষে শুনানি করলে এটা হবে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। তাজুল ইসলাম এ সময় এহসানুল হক সমাজীকে আসামিপক্ষে শুনানি না করতে অনুরোধ জানান।
এরপর এহসানুল হক সমাজী আদালতকে বলেন, আমি এখনও ফরমাল কোনো লেটার পাইনি। ফরমাল লেটার পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না। এছাড়া যে পদে আমাকে নির্বাচিত করা হবে, সেটা আমি গ্রহণ করি কি না তাও ভাববার বিষয়।
অ্যাডভোকেট সমাজী কোন আসামির পক্ষে এসেছেন আদালত জানতে চাইলে তিনি পাঁচজন আসামির নাম বলেন। এরপর তিনি শুনানি না করে আরেক আইনজীবীকে দায়িত্ব দেন। পরে প্রসিকিউশনের আবেদনে ওই ১৩ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
শুনানি শেষে প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শুধু জুলাই–আগস্ট মাসেই নয়, বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পরই গুম–খুন ও হত্যার বীভৎসতা সৃষ্টি করে। হিটলারের সময়ের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতো ক্যাম্প তৈরি করে তাতে নিষ্ঠুরভাবে বন্দিদের নির্যাতন করা হয়েছে। তারা শুধু গণহত্যাই করেনি, নির্যাতনের যত রকম পন্থা রয়েছে সবই বাস্তবায়ন করেছে, যা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না, বিচারের মুখোমুখি হতে হয়, তা আজকের দিনের এক বড় শিক্ষা।
প্রধান কৌঁসুলি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিকরণ, দলীয়করণের মাধ্যমে একটি নিপীড়ক সংস্থায় পরিণত করা হয়েছিল, সে স্টোরি আমরা আদালতে তুলে ধরেছি। একটি পরিবারকে ক্ষমতায় রাখার উদ্দেশে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, এছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। আজকের সব অপরাধের প্রধান দায় শেখ হাসিনার। জুলাই অভ্যুত্থানে ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে টার্গেট করে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে।