হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু

| শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের চেষ্টায় গণহত্যার দুই অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত জুলাইআগস্টের গণঅভ্যুত্থানে চলা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরুর পর এই আদেশ আসে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার সরকারের সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আসামিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার, ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী এ আদেশ দেন। এ সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও বি এম সুলতান মাহমুদ। খবর বিডিনিউজের।

সুলতান মাহমুদ পরে বলেন, আজ দুটো পিটিশন দাখিল করেছি আমরা। প্রথমটিতে শুধু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন এবং অন্যটিতে ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে। ট্রাইব্যুনাল আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন এবং ১৮ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন সংলগ্ন অস্থায়ী ট্রাইব্যুনাল ভবনে বেলা সাড়ে ১১টায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিডিআর বিদ্রোহে ৭৪ জনকে হত্যা, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে হত্যা, র‌্যাবের বিচার বহির্ভূত হত্যা, জুলাইআগস্ট গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগের শাসনামলে মানবতাবিরোধী অপরাধের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। শেখ হাসিনাসহ পলাতক অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার কথাও তিনি বলেন।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ছাত্রজনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে গণহত্যা বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর অংশ হিসেবে প্রসিকিউটরদের বদলে ফেলার পর গত সোমবার নতুন তিন বিচারককে দায়িত্ব দিয়ে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও দুই সদস্য মঙ্গলবার প্রথম কর্মদিবসে ট্রাইব্যুনালে যান। বৃহস্পতিবার তারা মামলার কার্যক্রম শুরু করলেন।

গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্রজনতার আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ ৫৬টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের অনেককে সেসব মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রসিকিউশনের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাইআগস্টে সংঘঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যার বিস্তারিত বিবরণ এবং একই সঙ্গে একটি সরকারের দানবীয় সরকারে পরিণত হওয়া, নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্রদের গুলি করে মারার প্রেক্ষাপট আদালতে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে এবং আন্তর্জাতিক আইনে যেসব ব্যবস্থা রয়েছে, সেসব প্রক্রিয়া গ্রহণ করে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনাকে ১ মাসের মধ্যে ফেরাতে ব্যবস্থা নেব : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা