হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা

তদন্তের আবেদন মন্ত্রিসভার সদস্য ও প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে

| রবিবার , ৩ নভেম্বর, ২০২৪ at ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি তার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বাধীনভাবে তদন্তের এ আবেদন করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি একজন আইনজীবীসহ আরও দুজন ব্রিটিশ আইনজীবী।

মামলার বাদী ‘থ্রি বোল্ট কোর্ট চেম্বার্স’ এর ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন গত শুক্রবার সন্ধ্যায় লন্ডনবাংলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি দাখিল করা হয়েছে, বলেন ওই আইনজীবী। খবর বিডিনিউজের।

ছাত্রজনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ও বিভিন্ন থানায় শেখ হাসিনাসহ তার বিভিন্ন মেয়াদের মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং পুলিশসহ প্রশাসনের আমলাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার মধ্যে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ দায়েরের খবর এল।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী আইনজীবী আশরাফুল আরেফিন বলেন, মামলায় তার সঙ্গে রয়েছেন ব্যারিস্টার সারাহ ফোরে ও ব্যারিস্টার এমিল লিক্সান্দ্রু। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আইসিসি থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করা হয়েছে বলেও তুলে ধরেন তিনি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলন দমাতে শেখ হাসিনা সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, (তাদের) বিভিন্ন অপরাধের মধ্যে রয়েছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, গোপন বন্দীশালায় নির্যাতন, চলাচল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং গণহত্যার মত গুরুতর অপরাধ। মামলায় ভুক্তভোগীদের উপর সংঘটিত সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং ব্যাপক নিপীড়নের দলিলসহ ব্যাপক প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে সাক্ষী, ভিডিও প্রমাণ এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী আশরাফুল আরেফিন জুলাই ও আগস্টে আন্দোলনের সময়কার ঘটনাকে ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের এক পৈশাচিক নৃশংসতা’ হিসেবে তুলে ধরেন। বলেন, আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কোটা সংস্কার। তবে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর মতো ঘটনার পর এটি দ্রুতই বৃহত্তর আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। শিক্ষার্থীরা তখন কেবল কোটা সংস্কার নয়, বরং প্রশাসনিক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হন। এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়ার পর সরকার এর জবাব দেয় অমানবিক সহিংসতার মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে সরকার পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতো বাহিনী মোতায়েন করে। এই বাহিনী নির্বিচারে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী অস্ত্রযেমন বার্ডশট পেলেট এবং তাজা গুলিব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালায়। ইতিহাসের এই বর্বরতম নৃশংসতায় ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।

তার ভাষ্য, বাংলাদেশ সরকারের এই কঠোর ব্যবস্থার ফলে দেশে গণহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং অসংখ্য বিক্ষোভকারী নিখোঁজ হয়েছেন। এই নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লক্সঘনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লক্সঘনের উদাহরণ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এই গুরুতর অপরাধের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে সক্ষম হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকার কথা তুলে ধরে তারা আইসিসিতে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তীব্র আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যান। এখনও তার সেখানে অবস্থানের খবরই এসেছে। সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ বাংলাদেশি আইনজীবী আশরাফুল বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত থেকে রাজনৈতিক সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনার কারণে স্থানীয় আদালতে ঘোষিত কোনো দণ্ড কার্যকর হওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতায় বাধ্য হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশের মানুষ সাফল্য চায় তোমরা সেটা এনে দিয়েছ
পরবর্তী নিবন্ধডেঙ্গুতে দেশে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু