বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে স্পেশাল কেয়ারে রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থার হঠাৎ অবনতি হয়। মেডিকেল বোর্ডের ওই সূত্র এ বিষয়ে আর বিস্তারিত বলতে চাননি। তবে তিনি বলেছেন, বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ইতোমধ্যে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অনুকূল হলে তাকে বিদেশেও নেওয়া হতে পারে।
চীনের পাঁচ সদস্যের একটি চিকিৎসকদল ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছে। গতকাল রাতে তাদের এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখা গেছে। চীনা চিকিৎসকরা কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছিলেন বলে জানান হাসপাতালের কর্মকর্তারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, চীন ও সিঙ্গাপুর থেকে আজ আরো কয়েকজন চিকিৎসকের আসার কথা রয়েছে। চীন থেকে আসা মেডিকেল টিম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন ও মেডিকেল নথি দেখে বলেছেন, তাকে বিপদমুক্ত করা অসম্ভব নয়। খবর বিডিনিউজের।
বিএনপি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিতে সম্মত হয়েছে চীন। তারা তাকে চীনে নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে। তবে খালেদা জিয়ার পরিবার, বিশেষ করে ছেলে তারেক রহমান তাকে যুক্তরাজ্যে নিতে চান।
এদিকে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল জানিয়ে গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ধরনের খবরে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার দুপুরে তিনি বলেন, ম্যাডামের অবস্থা স্থিতিশীল আছে। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তার চিকিৎসা চলছে।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৩ নভেম্বর রাতে তাকে ঢাকার বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষা–নিরীক্ষায় বুকে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা সংকটময়।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে সার্বিকভাবে তার শারীরিক সুস্থতা এবং মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের ওপর। রোববার রাতে খালেদা জিয়ার অবস্থার অবনতির খবর আসে। এর মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খানকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়েছে তাদের নেত্রীকে।
আজম খান বলেন, উনি খুব ডিপ কন্ডিশনে, আমি ঠিক ডিপ কন্ডিশনের ব্যাখ্যাটা আপনাদের কাছে দিতে চাই না, এটুকু বলতে চাই, উনি খুব ডিপ কন্ডিশনেই আছেন। এটাকে আপনারা ভেন্টিলেশনও বলতে পারেন বা খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনও বলতে পারেন।
এর পরপরই বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেইসবুক পেইজে এক বার্তায় বলা হয়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত যে–কোনো তথ্য গণমাধ্যমে উপস্থাপন করবেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। অতএব, অযাচিত, যাচাইবিহীন বা বিভ্রান্তিমূলক কোনো তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ম্যাডামকে নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, এটা সঠিক নয়। কেউ এতে বিভ্রান্ত হবেন না। দলের চেয়ারপারসনের আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া করতে দলের নেতা–কর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে আগের মতোই ম্যাডামের চিকিৎসা চলছে। দয়া করে যে যাই বলুক, এ ব্যাপারে কারো কথায় কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিসকরা সার্বক্ষণিক ম্যাডামের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত আছেন। তাদের থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি, তার চিকিৎসা চলছে, এটাই আপডেট। আপনারা সবাই দোয়া করুন, যেন আল্লাহ যেন তাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন সুস্থভাবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি যথাসময়ে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হবে।












