বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে গতকালও তলিয়ে গেছে নগরের নিম্নাঞ্চল। পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটু সমান পানি জমেছিল নিচু এলাকায়। ওসব এলাকার দোকানপাট ও বাসা-বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে। অবশ্য সড়কে পানি থাকলেও বিধিনিষেধের কারণে লোকজন বের না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। তবে যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন তাদের ভোগান্তি হয়েছে। বিশেষ করে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে পানি ঢুকে যাওয়ায় রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ ছিল সীমাহীন।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বৃষ্টি। দুইয়ের সম্মিলনে তলিয়ে যায় নিঁচু এলাকা। গতকাল রোববার দুপুর ১টা ৩৭ মিনিটে ্পূর্ণ জোয়ার ছিল। এ সময় কর্ণফুলী নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ২৭ মিটার। যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ১টা ৩৭ মিনিটেও পূর্ণ জোয়ার ছিল। তখন পানির উচ্চতা ছিল ৪ দশমিক ৭৬ মিটার। কর্ণফুলীতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে নগরে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সোমবার ২টা ১৭ মিনিটে পুরোপুরি জোয়ার থাকবে। এ সময় কর্ণফুলী নদীতে পানির উচ্চতা থাকতে পারে ৪ দশমিক ৮১ মিটার। এ ছাড়া গত রাত ২টা ১৭ মিনিটেও ্পূর্ণ জোয়ার ছিল। তখন পানির উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ২৪ মিটার।
এদিকে গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের সময়ও ছিল বৃষ্টি। এমনিতেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল নিঁচু এলাকা। তখন বৃষ্টি হওয়ায় পানি নামতে সময় আরো দীর্ঘ হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় ২৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা শেখ হারুনুর রশিদ।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি ও জোয়ারের প্রভাবে নগরের মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, শুলকবহর, দুই নম্বর গেইট, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, শান্তিবাগ, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, হালিশহর, চান্দগাঁও, বাকলিয়ায় পানি উঠে যায়। এসব এলাকায় প্রায় হাঁটু পানি ছিল। তবে মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর ও দুই নম্বর গেইট এলাকা থেকে পানি দ্রুত নেমে যায়। আগ্রাবাদ এলাকায় কয়েক ঘন্টা পানি আটকে ছিল।
আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকের বাসিন্দা নজরুল বলেন, জোয়ার হলেই এখানে পানি উঠে। এতে পুরনো বাসা-বাড়িগুলোর নিচতলা পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। সেখানে সবসময় পানি জমে থাকে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচ তলায় পানি ঢুকে যায়। এতে হাসাপাতালের রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। হাসপাতালটির নিচতলায় থাকা একটি ওয়ার্ড সাময়িকভাবে দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালের সামনের সড়কে ছিল প্রায় হাঁটু পানি। মোজাম্মেল নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার অসুস্থ মাকে ভর্তি করা হয়েছে। বিভিন্ন দরকারে নিচে নামতে হয়। পানির জন্য আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক বলেন, সকালে বৃষ্টির সাথে জোয়ারে পানি নিচ তলায় ঢুকে পড়েছে। নিচ তলা উঁচু করেও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাচ্ছি না। চিকিৎসা সেবা উপরের তলায় স্থানান্তর করেছি। দাপ্তরিক কাজে তেমন সমস্যা হয়নি। পানির মধ্যে হাঁটতে হয়েছে। রোগী ও তাদের স্বজনদের কষ্ট হয়েছে।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সামনের এক দোকানদার বলেন, এ এলাকায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছি। সেই শুরু থেকেই দেখে আসছি বছরে তিন-চার বার এখানে পানি উঠে। বৃষ্টি হলে তো আছেই, জোয়ারেও উঠে। আসলে এটা নিঁচু এলাকা। পানি উঠবেই।
জলিল নামে আগ্রাবাদ এলাকার বয়স্ক এক লোক বলেন, সকাল ১২টার দিকে পানি উঠলে তা বিকেল পর্যন্ত থাকে। আবার রাত ২টায় জোয়ারের পানি আসে তা ভোর ৫টা পর্যন্ত থাকে। পানি নামার কোনো পথ নেই। খাল-নালা সব বন্ধ। পানি নামবে কিভাবে।