হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ

চট্টগ্রামে ৫ দিনে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ ।। সংকটপময় পরিস্থিতির শঙ্কা

রতন বড়ুয়া | সোমবার , ১৭ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ৫ দিনের ব্যবধানেই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বলতে গেলে এ মুহূর্তে চট্টগ্রামের সরকারিবেসরকারি অধিকাংশ হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীতে ভর্তি। হাসপাতালে যে হারে রোগী বাড়ছে, তা আশঙ্কাজনক মন্তব্য করে চিকিৎসক ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে হাসপাতালে আর জায়গা পাওয়া যাবে না। এর ফলে আরো নানামুখী সংকটের সৃষ্টি হতে পারে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ জুলাই চট্টগ্রামের সরকারিবেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫৮ জন। তবে ৫ দিনের ব্যবধানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সাড়ে তিনশ ছাড়িয়েছে। ১৫ জুলাই হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫৪ জনে। গতকাল এ সংখ্যা ছিল ৩৫৬ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৮২ জন ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়া সরকারিবেসরকারি অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে আরো ২৫৬ জন। সব মিলিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা সাড়ে তিনশর বেশি।

অথচ, ১০ জুলাই চমেক হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৩ জন। একইভাবে অন্যান্য সরকারিবেসরকারি হাসপাতালে সব মিলিয়ে ভর্তি ছিল ৯৭ জন। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৫ দিনের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালগুলোতে। বলতে গেলে ডেঙ্গু রোগীতে হাসপাতালগুলো এখন ভরপুর।

ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ৩০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে বলে জানান হাসপাতালটির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। অন্যান্য রোগীও রয়েছে। তবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। এখনই শয্যার বাইরে রোগী। চাপ আরো বাড়লে পরিস্থিতি কী হবে বুঝতে পারছি না। প্রাপ্তবয়স্ক ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ৩২ শযার একটি আলাদা ডেঙ্গু কর্নার করা হয়েছে আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে। এই কর্নারে গতকাল রাত পর্যন্ত ৩০ জন রোগী ভর্তি বলে জানান হাসপাতাল কার্যনির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল রেজাউল করিম আজাদ। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৭ জন শিশু রোগীও ভর্তি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে খুবই হাসফাঁস অবস্থা। কাল যদি কয়েকজন রোগীও আসে, ভর্তি নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। সেক্ষেত্রে রোগী আরো বাড়লে পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে উঠতে পারে।

মাত্র ৪/৫ দিনের ব্যবধানে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় চাপা উদ্বেগ ভর করেছে চমেক হাসপাতাল প্রশাসনে। জায়গা সংকটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনো আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করতে পারেনি। মেডিসিনের তিনটি এবং দুটি শিশু ওয়ার্ডে অনেকটা বিচ্ছিন্নভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যদিও ওয়ার্ডগুলোতে এক পাশে কর্নার করে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। রোগী বাড়তে বাড়তে এখন প্রায় একশর কাছাকাছি। কয়েকদিনের মধ্যেই এ সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে তা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও চিন্তিত।

তবে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসার সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের। তিনি বলেন, রোগীর চাপ হঠাৎ করেই বাড়ছে। রোগী বৃদ্ধির এই হার আশঙ্কাজনক। আন্তরিক ইচ্ছে এবং পরিকল্পনা থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে আমরা আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করতে পারছি না। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা বেশ কয়টি বিকল্প ভেবে রেখেছি। ও রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার তুলনামূলক বেশি। যদিও সব হাসপাতালেই এখন রোগী বাড়ছে। হাসপাতালের বাইরে আক্রান্তদের বড় একটি অংশ বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে অভিমত চিকিৎসকদের। চিকিৎসকরা বলছেন, চেম্বারে অনেক রোগী আসছেন। তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। বাসায় বসেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করার এবং ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

উল্লেখ্য, আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে আরও দুজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। একই সময়ে নতুন করে আরো ৭৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মাঝে মোট ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৭৭ জনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে দুজনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধব্যবসায়ীরা তার ভালোটা বোঝেন