হাসপাতালের পাওনা মেটাতে নবজাতককে দত্তক, ছেলেকে ফেরত চান মা

| রবিবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ

হাসপাতালের বিল পরিশোধে নবজাতককে অন্যের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হলেও এখন সন্তানকে ফেরত চান প্রসূতি ও তার স্বজনরা। যদিও বিষয়টির সুরাহার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্ত হয়নি ভুক্তভোগীরা। উপজেলা প্রশাসন বলছে, পরিবারটি চাইলে তাদের যথাযথ সহায়তা করা হবে। প্রসূতি শিরিন আক্তারের (২০) বাবার বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার মনিকুরা গ্রামে। তার বাবা সিরাজুল ইসলাম গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে ভাড়া বাসায় থেকে স’মিলের (কাঠ চেরাই কল) মিস্ত্রির কাজ করেন। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে অটোরিকশাও চালান।

পরিবারিক কলহে স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরির পর থেকে দেড় বছর বয়সি বড় ছেলেকে নিয়ে শ্রীপুরের ফরিদপুর গ্রামেই থাকছেন শিরিন। গত ১৬ অক্টোবর সন্তানসম্ভবা মেয়ে শিরিন আক্তারকে নিয়ে ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকার স্বাধীন নার্সিং হোম নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান বাবা সিরাজুল ইসলাম। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন শিরিন। সিরাজুল জানান, অভাবের সংসারে সন্তানসম্ভবা মেয়েকে নিয়ে ছিল বাড়তি চাপ। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশী শামসুন্নাহার নামের এক নারীর সঙ্গে পরামর্শ করেন সিরাজ। ওই নারী শিরিনের অস্ত্রোপচারের জন্য ১৩ হাজার টাকায় ময়মনসিংহের স্বাধীন নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেন। গত ১৯ অক্টোবর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিতে গিয়ে প্রসূতির স্বজনরা জানতে পারেন, হাসপাতালে বিল হয়েছে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল পরিশোধে তাদের ওপর চাপ দিতে থাকে। তবে ওই সময় তাদের কাছে শুধু ১৩ হাজার টাকাই ছিল। এক পর্যায়ে প্রতিবেশী শামসুন্নাহার নবজাতককে ‘দত্তক’ দেওয়ার পরামর্শ দেন। ওই নারী তাদের জানান, সন্তান দত্তক দিলে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেও নগদ কিছু টাকা মাকে দেওয়া হবে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি করা অতিরিক্ত টাকা দিতেই নবজাতককে শামসুন্নাহার ও তার পূর্ব পরিচিত শ্রীপুরের ফরিদপুর এলাকার আল আমিনের হাতে তুলে দেওয়া হয় দাবি করে সিরাজুল বলেন, হের পর থেইকা আমার মাইয়া সন্তানের জন্য খালি কান্দে।

প্রসূতি শিরিন আক্তার জানান, হাসপাতাল থেকে ছুটি নেওয়ার দিন দুপুরে তাকে ডেকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। তিনি সন্তানকে হাসপাতালের বিছানায় রেখে সেখানে যান। তখন তার হাতে ১ হাজার ৫০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে ওষুধ কিনে খাওয়ার কথা বলা হয়। ‘আমি তহন বুজতেও ফারি নাই যে, হেরা আমার সন্তানরে লইয়া যাইব। আমি ফিরা আয়া দেহি, হাসপাতালের বিছনায় আমার সন্তান নাই। শেষ বারের মতন আমার সন্তানরে তারা আমারে দেকতেও দিল না। এহন আমি আমার সন্তানরে ফিরত চাই।’

নবজাতকের নানা সিরাজ বলেন, এখন তিনি নাতিকে ফেরত আনতে চান। তবে শিশুটিকে ফিরিয়ে আনার কথা জানালে আল আমিন তাদের কাছে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু এতো টাকা পরিশোধের সামর্থ্য তাদের নেই। পরে তারা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় ৪০ হাজার টাকা দিয়ে শিশুটিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আল আমিনের সঙ্গে কথা হয়। এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের কেউ এখনও জানাননি। পরিবারটি যদি আসে, অবশ্যই তাদের যথাযথ সহায়তা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিবির পোশাকে বাসে আগুন,তাদের খুঁজছি : ডিবিপ্রধান
পরবর্তী নিবন্ধযুগে যুগে আল্লাহর অলিরা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে যাচ্ছেন