নগরীর সিআরবি এলাকা ‘হেরিটেজ জোন’ হিসেবে বন্দরনগরীর মহাপরিকল্পনায় ‘সংরক্ষিত এলাকা’ হওয়ায় সেখানে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
নগরীতে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় সিডিএ। এ প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য এখনো তাদের কাছে আবেদন করা হয়নি। বিডিনিউজ
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “আমাদের মাস্টারপ্ল্যানে এটি হেরিটেজ জোন হিসেবে আছে। সংরক্ষিত এলাকা। আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন দেব না। হেরিটেজ জোনে কর্মাশিয়াল কিছু করার সুযোগ নেই। এটা নগরীর একটা নান্দনিক স্থান যেখানে সবাই যেতে পারে। ডিসি হিলে আগে যাওয়া যেত, এখন সর্বসাধারণ যেতে পারে না। সিআরবি সারাদেশের মধ্যে অন্যতম নান্দনিক স্থান। আমাদের আর কোনো ওপেন স্পেস নেই।”
পূর্ব রেলের সদর দপ্তর (সিআরবি) এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইন্সটিটিউট স্থাপনের প্রকল্প নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সিডিএ এই বক্তব্য দিল।
এ প্রকল্পের জন্য বেসরকারি ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেডের সাথে সরকারের চুক্তি হয় গত বছরের মার্চে। সম্প্রতি প্রকল্পের জন্য রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনির কোয়ার্টার উচ্ছেদ শুরু হলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়।
ওই প্রকল্পের জন্য ৬ একর জমির কথা বলা হয়েছে পরিকল্পনায়। সিআরবি এলাকায় বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল, পাশের খালি জমি ও লাগোয়া রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি এলাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “আগে সার্কিট হাউজের সামনে খোলা জায়গা ছিল, সেখানে পার্ক হয়েছে। আউটার স্টেডিয়ামেরও একই দশা। স্টেডিয়ামের সামনে মানুষ হাঁটত-বসত। কী অবস্থা হয়েছে দেখতেই পাচ্ছেন। হেরিটেজ জোনে সব দেশে সাধারণ মানুষ যায়। যাই বলুক, এখানে হাসপাতাল করতে গেলে অনেক গাছ কাটা পড়বে ভবিষ্যতে। একটা হাসপাতাল মুখের কথা না। সিডিএ’র কাছে আসুক, হাসপাতালের জায়গা আমরা দেখিয়ে দেব, সিআরবিতে নয়।”
অনন্যা আবাসিক এলাকার ভেতরে হাসপাতাল হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “শুধু সিআরবি নয়, শহরের ভেতরে আর কোনো হাসপাতালের অনুমোদন দেওয়া হবে না এমনটা আমরা ভেবেছি। চট্টেশ্বরী থেকে প্রবর্তক মোড়ে এখন জ্যামের (এ এলাকায় বেশকিছু বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে) কারণে যাওয়া যাচ্ছে না। পাহাড়তলিতে রেলের অনেক জায়গা আছে। রাস্তা অনেক ভালো। রিং রোডসহ বিকল্প অনেক সড়ক নেটওয়ার্ক আছে। সেই সুযোগটা তারা নিক। চলাচলে বেশি সময় লাগবে না। সিআরবিতে হাসপাতালের কোনো অনুমোদন আমরা দেব না। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়কেও লিখব। সিডিএ মাস্টারপ্ল্যান এ কী আছে তা তো দেখতে হবে।”
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল।
সিআরবিতে পিপিপির আওতায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ১২ বছর।
সিআরবি এলাকাকে প্রাকৃতিক সবুজ বলয় এবং সাংস্কতিক চর্চার কেন্দ্রভূমি হিসেবে বর্ণনা করে সেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
সোমবার ১৭ জন জ্যেষ্ঠ নাগরিক এক বিবৃতিতে সেখানে হাসপাতাল স্থাপনের বিরোধিতা করেন। নানা আলোচনার মধ্যে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বুধবার সিআরবি এলাকা ঘুরে যান।
এর আগে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, হাসপাতাল প্রকল্পে কোনো শতবর্ষী গাছ কাটা পড়বে না। শিরীষ তলা বা সিআরবির উন্মুক্ত স্থানে ওই হাসপাতাল নির্মাণ হবে না। প্রকল্পটি গোয়ালপাড়া এলাকায় বাস্তবায়ন করা হবে।
তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, একবার বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হলে সিআরবির পুরো এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে।