হালিশহরে রেলওয়ের জমিতে (সিজিপিওয়াই) বেসরকারি কন্টেনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের প্রতিবাদে ও লিজ চুক্তি বাতিলের দাবিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অফিস ঘেরাওসহ বিক্ষোভ করেছেন রেলকর্মীরা। ধর্মীয় স্থাপনা ও কবরস্থানের জায়গা দখল করে প্রকল্প নেওয়ার অভিযোগ তুলে তারা ওই ইজারা চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ১১টায় রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কয়েকশ শ্রমিক–কর্মচারী, সিজিপিওয়াই এলাকায় বসবাসরত রেলকর্মী, তাদের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা রেলওয়ের কবরস্থান, মসজিদ, মাজার ও আপদকালীন জলাশয় দখল করে ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের প্রতিবাদে এবং লিজ চুক্তি বাতিলের দাবিতে জিএম কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। পরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএমের আশ্বাসে দুপুর ১টার পরে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন। এর আগে আন্দোলনকারীরা মিছিলসহ সিআরবি এলাকায় পৌঁছালে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ তাদের প্রবেশে বাধা দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তরের এরিয়ার ভেতরে প্রবেশ করে ‘লিজ বাতিল করো’, ‘কবরস্থান–মসজিদ–মাজার বাঁচাও’ স্লোগান দেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. সুবক্তগীনের অফিসের মূল ফটক বন্ধ করে দেন। পরে বাইরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন রেলকর্মীরা।
দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সুবক্তগীন। এসময় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল জিএম অফিসের দ্বিতীয় তলায় আধাঘণ্টা জিএম–এর সাথে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে নিচে নেমে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে জিএম মো. সুবক্তগীন বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। রেলের মহাপরিচালক ও সচিবসহ সবাই বিষয়টি জানেন এবং পরিদর্শনও করেছেন। আপনাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন থাকবে। কবরস্থান, মসজিদ ও মাজার সব কিছুই আগের অবস্থানে থাকবে। বুধবার (২২ অক্টোবর) গঠিত কমিটি গিয়ে স্থানগুলো ডিমার্কেশন করবে। আশ্বাসের পর দুপুর ১টার দিকে আন্দোলন স্থগিত করে শ্রমিকরা স্থান ত্যাগ করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, রেল কর্তৃপক্ষ বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়ে শতবর্ষী কবরস্থান, ধর্মীয় স্থাপনা ও জলাশয়ের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে জালিয়াতি করেছে। কবরস্থানটিতে প্রায় ৪৫০টি কবর রয়েছে। সব জেনেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে লিজ দেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, রেলওয়ের ইতিহাসে কখনো ধর্মীয় স্থাপনা ও কবরস্থান দখল করে প্রকল্প নেওয়া হয়নি, এবার রেলওয়ের ভূ–সম্পত্তি বিভাগ নিজেই আইন ভঙ্গ করছে। বিক্ষোভকারী রেল শ্রমিকরা বলেন, আন্দোলনের মধ্যেই কৌশলে মসজিদ–মাজার ও কবরস্থান উচ্ছেদের চক্রান্ত চলছে। রেল সচিব ও উপদেষ্টার মৌখিক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এখনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণের লিখিত আদেশ আসেনি যা প্রতারণার শামিল। যৌক্তিক দাবি আদায় না হলে সারাদেশে রেল ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে। তবুও কবরস্থান–মসজিদ বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জাতীয়তাবাদী রেল শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক এম আর মঞ্জু বলেন, বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়ে রেলের ভূ–সম্পত্তি বিভাগ কবরস্থান, ধর্মীয় স্থাপনা ও জলাশয়ের শ্রেণি পরিবর্তন করে জালিয়াতি করেছে। প্রায় ৪৫০টি কবর রয়েছে সেখানে। সব জেনেও ইজারা দেওয়া হয়েছে। রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, আন্দোলনের মধ্যেই মসজিদ ও কবরস্থান উচ্ছেদের চক্রান্ত চলছে। রেল সচিব ও উপদেষ্টার মৌখিক নির্দেশনা থাকলেও এখনো লিখিতভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণের আদেশ আসেনি। এটা প্রতারণার শামিল। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যৌক্তিক দাবি মানা না হলে সারাদেশে রেল ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে। তবুও কবরস্থান–মসজিদের জায়গায় স্থাপনা করতে দেওয়া হবে না। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রেলওয়ে জাতীয়তাবাদী রেল শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক এম আর মঞ্জু, রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, রেলওয়ে কারিগরি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস কে বারি, সিজিপিওয়াই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হোসেন শহীদ, সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান শিশির।
রেলের চুক্তি অনুযায়ী, রেলওয়ের হালিশহরের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) এলাকায় ২১ দশমিক ২৯ একর জমি কন্টেনার টার্মিনালের জন্য সিসিবিএলকে বাণিজ্যিকভাবে লিজ দেওয়া হয়। পরে সিসিবিএল চুক্তি করে বেসরকারি সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে। রেলওয়ে কর্মীদের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এলাকায় রেলের বিপুল পরিমাণ খালি জমি থাকলেও কবরস্থান ও মসজিদের সংলগ্ন জমিতেই আইসিডি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পাধীন ২১ দশমিক ২৯ একর জমির মধ্যে নাল, মসজিদ, ভিটা, খিলা, পুকুর, কৃষি, কবরস্থান ও রাস্তা শ্রেণির ভূমি রয়েছে। তবে এসব জমির বাস্তব শ্রেণি কিছুটা বা সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে বলে চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে।