মহিমান্বিত ফজিলতপূর্ণ রোজার মাসটি কখন আসবে– এই প্রতীক্ষায় থাকেন রোজাদার মুসলমানগণ। অন্যদিকে এই মাসে ভোগ্যপণ্যের বেশি চাহিদার সুযোগ নেন একশ্রেণির অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী। রোজাদার ও ভোক্তা সাধারণকে সীমাহীন দুর্দশায় ফেলে তারা এই মাসে ব্যবসার নামে লুণ্ঠনবৃত্তিতে নামে। রোজার মাস যেন তাদের কাছে চুটিয়ে ব্যবসা করার মোক্ষম সুযোগ এনে দেয়। অথচ আমরা বৈশ্বিক গণমাধ্যমে দেখি, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো রোজার মাসে ভোগ্যপণ্য ও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। রোজাদার ও ভোক্তা সাধারণ যাতে শান্তি–স্বস্তির সঙ্গে কেনাকাটা করতে পারেন– এই উদ্দেশে মুসলিম দেশগুলো পণ্যমূল্যে ছাড় দেয়। এটাই তো প্রত্যাশিত। আমাদের দেশে এই ধারা ও প্রবণতা এখনো দেখা যায় না।
রোজার মাস আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। অথচ এই মাসে যখন দেখা যায়, পণ্যমূল্যের চাপে জনগণ পিষ্ট হন, ভোগ্যপণ্যের দামে রোজাদাররা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন, তখন তা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ব্যবসার নামে ভোক্তাদের পকেট কাটা বন্ধে সরকার প্রতি বছরই নানা পদক্ষেপ নেয়। এবারও প্রশাসন বাজারে নজরদারির ঘোষণা দিয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছে বাজারগুলোতে। তবুও অবস্থার বেশি হেরফের ঘটে না। কেবল আইন করে কিংবা অভিযান চালিয়ে অসাধু ব্যবসার লাগাম টানা যাবে না। ব্যবসায়ীসহ সর্বসাধারণের মাঝে নৈতিক চেতনা, কল্যাণচিন্তা, শুভবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের জাগরণ আজ বড় প্রয়োজন। ভোক্তা সাধারণ ও রোজাদারদের কষ্ট দেয়া যে অবিচার ও জুলুম তা সবার জানা থাকা দরকার।
হালাল পন্থায় ব্যবসা প্রিয় নবীজীর (সা.) সুন্নাত। নবীজী (সা.) নিজেও ব্যবসা করেছেন। স্ত্রী বিবি খাদিজার (রা.) ব্যবসার জিম্মাদারি অর্পিত হয় তাঁর ওপর। মানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) বলেছেন, ‘সৎ ব্যবসায়ীগণ জান্নাতে আমার সঙ্গী হবেন।’
অতএব স্বাভাবিক নিয়ম–নীতি মেনে হালাল ব্যবসায় বরকত রয়েছে। সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য প্রিয় নবীজীর (সা.) সুসংবাদ আমাদের অনুধাবন করতে হবে। অন্যদিকে ব্যবসার নামে ভোক্তাদের কষ্ট দেয়ার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মাহে রমজানে এই দৃঢ় প্রত্যয় নিতে হবে আমাদের।