হালদা নদীতে এপ্রিল–মে মাসে বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়ার নিয়ম। কিন্তু এপ্রিল মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হাওয়ায় নদীতে মাছ ডিম ছাড়েনি। মে মাসে বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলেই ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। এদিকে এপ্রিল মাসে কয়েকদিনে দুয়েক পশলা বৃষ্টির ফলে হালদায় মাছের আনাগোনা যেমন বেড়েছে, তেমনি মাছের পেটে ডিমের পরিপক্কতাও লাভ করেছে। এখন কেবল ভারি বর্ষণ হলেই মা মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে উঠবে হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। ডিম সংগ্রহকারীরা আহরিত ডিম ফুটিয়ে রেণু তৈরি জন্য নদীর পাড়ে মাটির কুয়া ও হ্যাচারিগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত করে রেখেছেন। এ বিষয়ে হালদা নদীর প্রাকৃতিক ডিম সংগ্রহকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম বলেন, হালদা নদী আমাদের কাছে মায়ের মতো। এ নদীতে প্রতি বছর এপ্রিলের শেষের দিকে এবং মে মাসে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময়টা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। আগ্রহ আর ঊদ্দীপনার শেষ থাকে না কখন মাছ ডিম ছাড়বে। নদীকে রক্ষা করতে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকি। আশাকরি বৃষ্টি হলে এবার আমরা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ডিম সংগ্রহ করতে পারব।
এদিকে মাছ শিকার বন্ধে বেশ সরব থেকে হালদায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিদুল আলম বলেন, ডিম ছাড়ার মৌসুমকে সামনে রেখে হালদায় দিনে রাতে অভিযান চালানো হচ্ছে। নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এই অভিযান পরিচালনা করেছি।
তিনি আরও বলেন, নদীতে উপজেলা প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযান ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে অবৈধ জাল ও ড্রেজার জব্দ, বালু উত্তোলন ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা বন্ধ রাখার কারণে নদীতে মাছের মজুদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া হালদা পাড়ের মাছুয়াঘোনা ও গড়দুয়ারা এলকার ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে সচেতনতা ও ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রেকর্ড সংখ্যক ডিম সংগ্রহ করা হবে এবার।
হালদার গবেষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে হালদা নদীতে ঢল নামে। নদীতে পানির তীব্র স্রোত সৃষ্টি করে পানির তাপমাত্রা ২৭–২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে ১৪–১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকলে ডিম তা দেয়ার উপযোগী হয়। ওই সময় প্রবল স্রোতের কারণে পানি ঘূর্ণনের ফলে ডিম পরিপক্ব হয়ে ফুটে এবং পোনার জন্য অক্সিজেন প্রাপ্তি বাড়ে। এ রকম প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি হলে অর্থাৎ দুই–তিন দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হলে হালদা নদীতে প্রবল স্রোতসহ অন্যান্য ভৌত–রাসায়নিক ফ্যাক্টরগুলো তৈরি হলে হালদায় ডিম ছাড়বে মা–মাছ।