হালদা পাড়ে সরকারি ৬ হ্যাচারির চারটিরই বেহাল দশা

দুটিতে তালিজোড়া দিয়ে কাজ করার চেষ্টা, দুটি পরিত্যক্ত, একটিতে ছাগলের খামার

মীর আসলাম, রাউজান | সোমবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু নদীপাড়ে মৎস্য বিভাগের ছয়টি হ্যাচারির মধ্যে দুটি ছাড়া বাকি হ্যাচারিগুলোর অবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। মৎস্য বিভাগ থেকে তদারকির অভাব ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের অবহেলার কারণে বিলম্বে কাজ শুরু হয়েছে। এখন দুটি হ্যাচারির কাজ তালিজোড়া দিয়ে শেষ করার চেষ্টা চলছে। দুটি হ্যাচারি অনেক বছর ধরে রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। একটি হ্যাচারিতে ছাগলের খামার করা হয়েছে। হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মৎস্য বিভাগের ৪৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান। নদীর পাড়ে মৎস্য বিভাগের ছয়টি হ্যাচারির সংস্কার, সাথে পুকুর খননের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত বরাদ্দ। হালদা থেকে মৌসুমি ডিম সংগ্রহকারীদের জন্য হ্যাচারিসমূহকে সংস্কার করে আধুনিকায়ন করার কথা এই বরাদ্দ থেকে। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, চারটি হ্যাচারির ডিম ফোটানোর ট্রাংক ও সিস্টেনসমূহের ভঙ্গুর অবস্থায় আছে।

হালদাপাড়ের মৎস্যজীবীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাসে নদীর মাছ চোরদের জাল পাতার বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযানে এবার অনেকটা সুফল মিলেছে। হাটহাজারী ও রাউজানের উপজেলা প্রশাসন নৌ পুলিশকে সাথে নিয়ে রাতদিন অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার মিটার জাল জব্দ করেছে। প্রশাসনের অভিযানে জাল পাতা কমে যাওয়ায় এখন নদীতে মা মাছের বিচরণ বেড়েছে। মৎস্যজীবীরা মনে করেন আগামী অমাবস্যার তিথিতে ঝড়বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নদীর উভয় পাড় ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমি ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা, জাল নিয়ে প্রস্তুত আছেন। তবে তাদের অভিযোগ, সরকারি হ্যাচারিগুলোর সংস্কার কাজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। হ্যাচারিগুলো সংস্কারের কাজ চলছে ধীরগতিতে। তাছাড়া বিলম্বে কাজে হাত দেওয়ায় ডিম সংগ্রহকারীরা ভরা মৌসুমে এবার সুফল পাবেন না। ডিম সংগ্রহকারীদের সনাতন পদ্ধতিতে মাটির কুয়ায় ডিম রেখে আগের মতো পোনা উৎপাদন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মৎস্য বিভাগের হ্যাচারিগুলোতে ডিম সংগ্রহকারীদের সেবা দেওয়ার মতো জনবল নেই। একজন কেয়ারটেকারের সাথে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন করে কম্পিউটার অপারেটর।

গত বৃহস্পতিবার হালদার উভয় পাড়ে থাকা মৎস্য বিভাগের ছয়টি হ্যাচারি ঘুরে দেখা যায়, রাউজানের তিনটি হ্যাচারির মধ্যে পশ্চিম গহিরা ও কাগতিয়া হ্যাচারি অনেক বছর ধরে পরিত্যক্ত। এ দুটি হ্যাচারি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রাউজানের একমাত্র মোবারকখিল হ্যাচারিকে ডিম ফোটানোর উপযোগী করতে সংস্কার কাজ চলছে।

হাটহাজারী অংশে থাকা তিনটি হ্যাচারির মধ্যে গড়দুয়ারার মাছুয়াঘোনা হ্যাচারিতে সংস্কার কাজ চলছে। এখানে দৈনিক মজুরিতে কাজে নিয়োজিত সাধারণ শ্রমিকদের সাথে কাজ করছেন গত বছর এই হ্যাচারিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে নিয়োগ পাওয়া সাইফুল ইসলাম। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ছাড়া এই হ্যাচারিতে আছেন একজন কেয়ারটেকার। তবে ওই সময় তিনি হ্যাচারিতে ছিলেন না। সাইফুলের আশা, হ্যাচারিতে থাকা ৪০টির মতো সিস্টেনের সবকটিতে ডিম ফোটানো যাবে।

মাদার্শা শাহ মাদারী হ্যাচারিতে দেখা যায়, আগের তৈরি পাকা সিস্টেনের (ট্রাংক) বেহাল দশা। অধিকাংশ ট্রাংক ফুটো হয়ে পড়ে আছে। দুজন মিস্ত্রি ট্রাংকের ফুটো বন্ধে কাজ করছেন।

স্থানীয় রাজমিস্ত্রি সামশুল আলম জানান, হ্যাচারির ডিম ফোটানো ট্রাংকগুলোতে লাগানো পানির সঞ্চালন লাইনের বেশিরভাগ নাটবল্টু চুরি হয়ে গেছে। এই হ্যাচারির গভীর নলকূপের পাম্পটি নষ্ট থাকায় একটি শ্যালো পাম্প নদীর সাথে সংযোগ দিয়ে রাখা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, এই হ্যাচারির ৪০টির মতো ট্রাংক থাকলেও সংস্কারের পর মাত্র কয়েকটিতে ডিম রেখে পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

এদিকে মদুনাঘাট বড়ুয়া পাড়ার হ্যাচারিটি একরকম বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। এই হ্যাচারির প্রায় প্রতিটি ডিম ফোটানোর পাকা ও ফাইবার সিস্টেন ময়লাআবর্জনায় ভর্তি। এই হ্যাচারিটি এখন ব্যবহার হচ্ছে ছাগলের খামার হিসেবে। হ্যাচারিটির প্রায় পাইপলাইনে মরিচায় জং ধরে নষ্ট হয়ে আছে।

জানা যায়, এই হ্যাচারি দেখছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত কেয়ারটেকার ইয়াকুব আলী। তিনি এখানে ছাগলের খামার করেছেন। তিনি জানান, হ্যাচারিতে হ্যাচারি সহকারী হিসাবে আছেন আবদুর রহমান নামে একজন। নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাইফুল ইসলাম নামে একজন কম্পিউটার অপারেটর।

কেয়ারটেকার ইয়াকুব আলীর দাবি, হ্যাচারিতে সবকিছু ঠিক আছে। তবে এই হ্যাচারির সুবিধাভোগীরা অভিযোগ করেন, ইতোপূর্বে এই হ্যাচারিতে ডিম নিয়ে এসে ত্রুটির কারণে ডিম নষ্ট করতে হয়েছে। এবারও রাখা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায়।

হালদা প্রকল্পের বর্তমান পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কিছু জটিলতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও হ্যাচারিগুলো সংস্কার কাজ দ্রুততার সাথে শেষ করার চেষ্টা চলছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।

এদিকে হালদা প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি রাতে ফোন করেন হ্যাচারির কেয়ারটেকারকে। তিনি ছাগলের বিষয়টি জানিয়ে সাবধান করেন। এরপর গতকাল হ্যাচারি থেকে অনেকগুলো ছাগল অন্যত্র নিয়ে যান। গতকাল হ্যাচারির ভিতর পুকুরপাড়ে কয়েকটি ছাগল দেখা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিভাসুর দুই দিনব্যাপী ফিশ ফেস্টিভ্যাল শুরু কাল
পরবর্তী নিবন্ধনাগরিকত্ব নিশ্চিত হলে ঢাকা ভারত থেকে বন্দীদের ফিরিয়ে আনবে : তৌহিদ