হালদা নদীর পাড়ে তামাক চাষ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, তামাক চাষের কারণে মাটি, পানি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মোবারকখীল হ্যাচারী প্রাঙ্গণে হালদা নদী পরিদর্শন এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, তামাক মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফসল। এমন ফসল উৎপাদন করার যৌক্তিকতা নেই। তিনি তামাক চাষিদের বিকল্প জীবিকায় উৎসাহিত করতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা হয়ে থাকা রাবার ড্যাম বন্ধ করে দেয়া হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, হালদা নদী দেশের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। এটি এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র যেখানে কার্প জাতীয় মাছ প্রাকৃতিকভাবে ডিম ছাড়ে। এই নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হলে জাতীয় মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়বে। কোনো প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষায় প্রাকৃতিক এই মৎস্য ভান্ডারের ক্ষতির কারণ হোক তা আমরা চাই না।
উপদেষ্টা হালদা নদীতে হ্যাচারিতে উৎপাদিত রুই, কাতলা ও মৃগেল পোনা অবমুক্ত করেন এবং সভা শেষে নদী রক্ষায় প্রযুক্তির অংশ হিসেবে ড্রোন ক্যামেরার উদ্বোধন করেন। তিনি জানান, এখন থেকে মাছ চোরদের তৎপরতা রোধে চারটি ড্রোন পাহারায় থাকবে। আরো বিস্তৃত পরিসরে নদীর পাড়ে সিসি ক্যামরা লাগানো হবে।
সভায় যোগ দেয়ার আগে স্পিড বোটে নদীতে ভ্রমণ করেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। নদীতে দূষণের ভয়াবহতা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, নদীতে ঘুরে যতটুকু জানলাম, হাজারও বই পড়লেও হালদার সম্পর্কে এতটুকু জানা সম্ভব হতো না। হালদার মৎস্য সম্পদ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আমরা প্রত্যাশা করি না। দূষণের উৎস চিহ্নিত করে যাতে এসব বন্ধে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া যায় সেই বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সাথে আলাপ করবেন বলে তিনি জানান।
মতবিনিময় সভায় মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, নদীর নাব্যতা সংকটে কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন বিঘ্নিত হচ্ছে। এই সংকট উত্তরণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাবে। হ্যাচারির সংখ্যা বাড়ানো হলে পোনা উৎপাদন বাড়বে, যা দেশের মৎস্য সম্পদে ইতিবাচক অবদান রাখবে। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ‘হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’র পরিচালক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিনের সভাপতিত্বে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, চট্টগ্রাম মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. হেমায়েত হোসেন, যুগ্মসচিব ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আব্দুছ ছবুর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা নদী গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া, রাঙামাটি কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ম: নাসিম হায়দার, চট্টগ্রাম নৌ পুলিশ সুপার এএফএম নিজাম উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিসান বিন মাজেদ, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.বি.এম মশিউজ্জামান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় ডিম সংগ্রহকারী, মৎস্যজীবী, স্থানীয় সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। বক্তব্য রাখেন ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর, মো. ইলিয়াস প্রমুখ।










