মোহাম্মদ দিদারুল আলম বয়স ৫৫ ছুঁই ছুঁই। গত বৃহস্পতিবার রাতে হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে পানি এসে আঁছড়ে পড়ে তাঁর বসতভিটায়। এরপর পানির উচ্চতা শুধুই বেড়েছে। দিদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘হু হু করে ঘরে ঢুকেছে হালদার পানি। কিছু বুঝে উঠার আগেই টিনের বাড়িটি ভেঙে পড়ছিল। গায়ে পড়া কাপড় নিয়ে কোনমতে জীবন নিয়ে বেরিয়ে আসি।’
দিদারুল আলমের বাড়ি ফটিকছড়ি–হাটহাজারীর সীমান্ত নাজিরহাট নতুন ব্রিজের ২০০ গজ পশ্চিমে। বাড়ির সাথে লাগোয়া হালদা নদীর পাড়। এখানেই স্থাপন করা হয়েছিল পানি প্রতিরোধী বাঁধের জন্য ব্লক। এছাড়াও এখানে আরো শতাধিক পরিবারের মাঝে ঝুকিপূর্ণ ১৫ পরিবারের ঘর নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দিকে যখন দিদারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, খোলা আকাশের নিচে কিছু সরঞ্জামাদি উদ্ধার করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। জিজ্ঞেস করলে বলেন– ১দিন আগে ভাত খেয়েছি, কোথায় গিয়ে সবাইকে নিয়ে উঠব তাও জানিনা। সব শেষ হয়ে গেল বাবা। পাহাড়ি ঢল আর ভারি বর্ষণে হালদা নদীর পানি বিপদসীমার ১১০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে নাজিরহাট নতুন ব্রিজের পশ্চিমে হালদার নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে বাড়িঘর ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে পুরো ফরহাদাবাদ এলাকায়। এতে আনুমানিক ১৫টি বসতঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ এলাকার আরেক বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের ঘর তলিয়ে গিয়ে বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে। তারা সপরিবারে রাস্তায় বসে আছে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি কেমন হয়েছে, জানতে চাইলে মনোয়ারা বেগম ও মিনা আক্তার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন। বলেন, তাঁদের বাড়িঘর শেষ হয়ে গেছে। ভেসে গেছে বাড়ির সব সরঞ্জামাদি, এখন কোথায় থাকবে তাও জানেন না তারা, পড়ার মত কাপড় ও নেই, ভেজা এক কাপড়েই দিন কাটছে তাদের। হালদার আশপাশের এলাকা এখন পানিতে ডুবে আছে। যেদিকে চোখ যাচ্ছে, শুধু পানি আর পানি। গ্রামের পর গ্রাম; পানিতে ডুবে আছে। এ কারণে দুর্ভোগে পড়েছে মো: দিদারুল আলম, মনোয়ারা বেগম ও মিনা আক্তারের মতো লাখো মানুষ। যাঁরা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাঁদের ঠিকানা হয়েছে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, স্থানীয় মসজিদ ও মন্দিরে। বিভিন্ন স্কুলের ছোট ছোট কামড়ায় জবুথবু হয়ে রয়েছেন বয়োজ্যেষ্ঠ নারী ও পুরুষ, শিশু ও তরুণ।
প্রবল বৃষ্টিতে এ পাহাড়ি ঢলে আরো হালদা নদীর বাঁধের ৩টি স্থানে ভাঙন এবং ১৯টি স্থানে বিপদসীমার উপরে পানি উপচে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এরপর গত ২ দিনের ভারী বৃষ্টিতে হালদা নদীর বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন এলাকা ডুবে গেছে। বন্যার পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় গতকাল রাত থেকেই বিদ্যুৎ নেই। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ–বিভাগীর প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহাগ তালুকদার বলেন, গত ৫০ বছরে হালদা নদীর পানি বিপদসীমার সর্বোচ্চ ১১০সে.মি উপরে প্রবাহিত হয়েছে। নাজিরহাট পুরাতন ব্রীজের পশ্চিমে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২০২১ সালে এখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ হওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় ঝামেলার কারণে সেটি হয়নি। এখনো প্রতিরোধী বাঁধ স্থাপন করলে সেটিও স্থায়ী হবেনা, এমন ঘটনার আবারো পুনরাবৃত্তি ঘটবে। তাই আমরা চেষ্টা করবো স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের।