হালদা নয়, পানি চাঁদপুর থেকে

মীরসারাই ইকোনমিক জোন ।। কুমিল্লা লাকসাম ফেনীকে যুক্ত করা যাবে ওয়াসার নেটওয়ার্কে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

হালদা নদী নয়, চাঁদপুর থেকে আসবে মীরসরাইয়ে গড়ে ওঠা দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোনের প্রয়োজনীয় পানি। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাঁদপুরের পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনা থেকে পানি আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সার্ভে করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনীর উপকূলীয় এলাকার প্রায় ত্রিশ হাজার একর ভূমিতে বহুমুখী কার্যক্রম চলছে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর নামের এই ইকোনমিক জোন উন্নয়নের কাজ করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বেজার কাছ থেকে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ শত শত একর ভূমি বরাদ্দ নিয়েছে। দেশি-বিদেশি শীর্ষস্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠান মীরসরাই ইকোনমিক জোনে জায়গা নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই শিল্পনগরে ১৫ থেকে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই শিল্পনগরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে পানি। এলাকায় প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের শিল্প কারখানার উৎপাদন শুরু করার ক্ষেত্রে তা প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর বাস্তবায়নের ব্যাপারে পরিচালিত সার্ভেতে চারটি উৎস থেকে পানির ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম উৎস দেখানো হয়েছে মীরসরাইয়ের মহামায়া লেক। কিন্তু এই লেক থেকে শুষ্ক মৌসুমে এত বিপুল পরিমাণ পানি পাওয়া সম্ভব হবে না। দ্বিতীয় সোর্স দেখানো হয়েছে ফেনী, মুহুরী, মনু নদী ও ছোট ফেনী নদী। কিন্তু এই চার নদীর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়, নদীগুলো উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ হলেও এগুলো ভারতের ভিতর দিয়ে ফের বাংলাদেশে এসেছে। ভারত তাদের অংশে স্লুইচগেট নির্মাণ করে চারটি নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করে। এতে করে বর্ষাকালে এখানে পানির সমস্যা হয় না। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে ভারত স্লুইচগেট বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এই চারটি নদীতে পানি থাকে না। ফলে এই উৎসের উপরও নির্ভর করা যাবে না। তৃতীয় সোর্স হিসেবে জমিতে পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি থেকে প্রয়োজনীয় পানির সংস্থান করা। কিন্তু এজন্য ১৫ হাজার একর জমির প্রয়োজন, যা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। চতুর্থ সোর্স হিসেবে সমুদ্রের পানির কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সমুদ্রের লবণাক্ত পানি রিসাইক্লিং করে মিষ্টি করতে হলে প্রতি লিটার পানিতে ৪ থেকে ৫ টাকা খরচ হবে। এক হাজার লিটার পানিতে খরচ হবে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে পানি কিনে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকবে না।
ফলে সর্বশেষ উৎস হিসেবে হালদা থেকে পানি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বিষয়টি আলোচনায় আসার সাথে সাথে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করা হয়। হালদা ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এই অবস্থায় হালদা থেকে পানি নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে নতুন উৎসের খোঁজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম ওয়াসাকে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা নানাভাবে সার্ভে করে চাঁদপুর থেকে পানি আনার সিদ্ধান্ত নেয়। চাঁদপুরের মেঘনা, পদ্মা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় মিষ্টি পানির বিশাল ভান্ডার রয়েছে। ওখান থেকে দু-চারশ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হলেও তা প্রভাব ফেলবে না। মিষ্টি পানি হওয়ায় বাড়তি খরচও করতে হবে না। শুধু লাইন স্থাপন করে মীরসরাই পর্যন্ত পানি নিয়ে আসার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
এক্ষেত্রে মীরসরাই থেকে ফেনী হয়ে নোয়াখালীর রামগতি হয়ে চাঁদপুরের একটি রাস্তা রয়েছে। এই পথে পানি আনতে হলে ১২৬ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করতে হবে। অপরদিকে চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা এবং ফেনী হয়ে মীরসরাই পর্যন্ত পানি আনারও একটি পথ রয়েছে। চাঁদপুর থেকে লাকসাম ফেনী হয়ে মীরসরাইয়ে পানি আনার অপর একটি রাস্তাও চিহ্নিত করা হয়েছে। রেললাইনের পাশ দিয়ে ১৩২ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করে প্রয়োজনীয় পানি আনার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই পথে পানি আনতে হলে রেললাইনের পাশ দিয়ে পাইপ লাইন আনা যাবে। এতে বাড়তি ঝামেলায় যেতে হবে না। চট্টগ্রাম ওয়াসার পক্ষ থেকে এই পথে চাঁদপুরের তিন নদীর মোহনা থেকে পানি আনার প্রস্তাব জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ আজাদীকে বলেন, হালদা থেকে নয়, মীরসরাই ইকোনমিক জোনের প্রয়োজনীয় পানি আনা হবে চাঁদপুর থেকে। তিন নদীর মোহনা থেকে মিষ্টি পানি এনে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের প্রয়োজনীয় পানির সংস্থান করা হবে। ওখান থেকে যত ইচ্ছে পানি আনা যাবে। মিষ্টি পানি। তাই বাড়তি খরচেরও ঝামেলা নেই। চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা, লাকসাম, ফেনী হয়ে মীরসরাই পর্যন্ত পানির এই পাইপ লাইন নির্মাণকালে কুমিল্লা, লাকসাম কিংবা ফেনীকেও ওয়াসার পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কে যুক্ত করা যাবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিআরটিএ সার্ভারে হাজারও প্রতারক
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ