মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গেজেট পরিবর্তন না হওয়ায় হালদা নদীর উন্নয়নমূলক অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই হালদা নদী রক্ষায় গেজেট পরিবর্তন করা হবে। তিনি বলেন, হালদা নদী রক্ষায় গেজেট সংশোধনের মাধ্যমে তামাক চাষ ও নদী দূষণ বন্ধ করা হবে। গত মঙ্গলবার নগরীর সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মৎস্য হেরিটেজ বাস্তবায়ন তদারকি কমিটির ১৫তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, হালদা নদী উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে একযোগে ও সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য এই সভা থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে হালদা নদী রক্ষায় ডিপিপি ও চলমান প্রকল্পের বাইরে থেকেও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার উপায় নিয়ে গবেষণা করতে হবে। হালদা নদী রক্ষায় সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে উপদেষ্টা বলেন, প্রকল্প মানে শুধু অর্থ ব্যয় নয় বরং প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে সঠিক পরিকল্পনা, কার্যকর বাস্তবায়ন ও তদারকি অত্যন্ত জরুরি।
তামাক চাষ বন্ধের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, তামাক চাষের কারণে হালদা নদীর তীরবর্তী ভূমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, যা নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি তামাক চাষ বন্ধে কৃষকদের বিকল্প জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, হালদা নদীকে তামাক চাষমুক্ত করতে হবে, এ লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। হালদা নদী রক্ষায় গভীরভাবে পর্যালোচনা করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা চিহ্নিত করা হবে। বর্তমান সরকারের সময়ের মধ্যেই হালদা নদী সংরক্ষণ ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় যেসব কাজ করার প্রয়োজন তা করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র বললেই প্রথমে নাম আসে চট্টগ্রামের ‘হালদা নদী’র নাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এটির উপস্থিতি আজ হুমকির মুখে পড়েছে। নদী থেকে বালি উত্তোলন, নদীতে জালের ব্যবহার, কলকারখানার দূষিত পানি নদীতে প্রবেশ, নদী তীরের মানুষের অসচেতনতার কারণে এটি আজ হুমকির মুখে। অথচ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এই চারটি কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল ২০১৮ সালে। কিন্তু সে নিয়ম মানা হচ্ছে কোথায়? পরিণামে হালদা নদীতে মারা যাচ্ছে মা মাছ এবং ডলফিন। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ডলফিন মারা গেছে ৩৩টি, মৃত মা মাছ উদ্ধার করা হয়েছে ১০টি যা জীববৈচিত্র্যের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। এ ব্যাপারে যদি এখন থেকে সচেতন হওয়া না যায় তবে কালের বিবর্তনে হালদা নদীর অস্তিত্ব পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তাঁরা বলেছেন, হালদা নদী রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। মহানগরীতে বসবাসরত লাখ লাখ মানুষের নিরাপদ পানির সংস্থান করে এই হালদা নদী। হালদা নদীর অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার জন্য এই নদীকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই নদী দেশের গর্ব। হালদা নদী বছরে ৪ ধাপে জাতীয় অর্থনীতিতে ৮শ কোটি টাকা যোগান দিয়ে থাকে। মোহরা ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে মহানগরীতে প্রতিদিন ১৮ কোটি লিটার সুপেয় পানির যোগান দেয়। নদীর গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর এই নদীকে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করেছে। দেশের ৬৪ জেলার ৬৪ নদীকে দূষণ মুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে হালদা নদীকে দূষণমুক্ত করার জন্য পরিকল্পনা দরকার। হালদা বাঁচলে চট্টগ্রাম তথা হালদা পাড়ের মানুষ বাঁচবে। তাই দেশের এই সম্পদ যে কোন কিছুর বিনিময়ে রক্ষা করা প্রশাসনসহ প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব।
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও হালদা নদী সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অংশীজনের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা নদীর অব্যবস্থাপনার মধ্যে নদীর গতিপথ পরিবর্তন, অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ, তীরবর্তী স্থানে ইটভাটা ও কলকারখানা স্থাপন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বর্জ্যের কারণে নদী দূষণসহ নানামুখী অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলেন, নদী রক্ষায় হালদা পাড়ে বসবাসকারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।








