হালদায় সহনীয় মাত্রার ৩৬ গুণ বেশি লবণাক্ততা

মা মাছের ডিম ছাড়া নিয়ে সংশয়

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৭ মে, ২০২১ at ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ

হালদার লবণাক্ততা সহনীয় মাত্রার ৩৬ গুণ বেশি বেড়ে যাওয়ায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ। নদীতে মা মাছের আনাগোনা এবং সব ধরনের প্রস্তুতি থাকলেও শুধুমাত্র লবণাক্ততার জন্য ডিম ছাড়া সম্ভব হয়নি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। লবণাক্ততা না কমলে মা মাছের ডিম ছাড়বে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। তবে উজানে ভারী বৃষ্টি এবং সাগর শান্ত হলেই কেবল হালদার লবণাক্ততা কমবে বলে বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো জানিয়েছে।
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ জোয়ার ভাটার হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার জো পার হলেও ডিম ছাড়েনি মা মাছ। নদীতে প্রচুর মাছের আনাগোনা রয়েছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাত এবং গতকাল ১২ ঘণ্টার মধ্যে দুই দফা নমুনা ডিম ছেড়েছে। কিন্তু নমূনা ডিম ছাড়লেও পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় মাছ ডিম ছাড়েনি বলে উল্লেখ করেছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছরই জো’র সময় মা মাছ প্রথমে নমুনা ডিম ছাড়ে। নদীর পরিবেশ এবং পানির সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নমুনা ডিম ঠিকঠাক থাকে। তখন মা মাছ সব ডিম ছেড়ে দেয়। গতবছর রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছিল মাছ। এবার অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী। কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত দুই দফায় নমুনা ডিম ছেড়ে মা মাছ পরীক্ষা করলেও অনুকূল পরিবেশ না পাওয়ায় ডিম ছাড়েনি। শুধুমাত্র লবণাক্ততার কারণেই মাছ ডিম ছাড়েনি উল্লেখ করে সূত্র বলছে, হালদা নদীতে লবণাক্ততা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এটা অকল্পনীয়। তাই ডিম ছাড়ার কোনো সুযোগ পায়নি মাছ। তীব্র লবণাক্ততার কারণে মাছ ডিম না ছেড়ে ধরে রেখেছে।
বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো বলছে, হালদা নদীতে সহনীয় লবণাক্ততার পরিমাণ ১পিপিটি। কিন্তু গতকাল পরীক্ষা করে দেখা গেছে, নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ ৩৬.৯ পিপিটি। সহনীয় মাত্রার ৩৬ গুণ বেশি লবণাক্ততার মাঝে মাছ ছাড়তে পারেনি মাছ। এত তীব্র লবণাক্ততার মাঝে ডিম ছাড়া সম্ভব নয় বলেও বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হালদার লবণাক্ততা তীব্র হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি নদীতে পরীক্ষা করে লবণাক্ততার পরিমান ৩৬.৯ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে গতকাল সাগরে প্রচণ্ড জোয়ার হয়েছে। জোয়ারের পানি কর্ণফুলী হয়ে হু হু করে ঢুকেছে হালদায়। এতে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। ফলে মাছের ডিম ছাড়ার মতো পরিবেশ ছিল না। পানিতে লবণাক্ততা কমে গেলে ডিম ছড়বে। উজানে ভারী বৃষ্টি হলে হালদার পানিতে লবণের পরিমাণ কমবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ইয়াস কেটে গেছে। এতে সাগর শান্ত হয়ে যাবে। তাই জোয়ারের তীব্রতাও কমবে। ফলে হালদায় লবণের পরিমাণ কমে যাবে। এখন কিছুটা বৃষ্টি হলেই মাছ ডিম ছাড়বে। চলতি মাসের ২৪ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ডিম ছাড়ার একটি জো রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে ভারী বৃষ্টি হলে মাছ আর জো’র অপেক্ষা করবে না, এমনিতেই ডিম ছেড়ে দেবে বলে জানান জানান। তবে হালদার লবণাক্ততা না কমলে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারবে না। এতে করে চলতি বছরের ডিম ছাড়া নিয়ে কিছুটা সংশয় এবং শংকা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৬ সালে হালদায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, হালদা নদী থেকে ২০১৯ সালে ৭ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে এক হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে মাছ পুরোমাত্রায় ডিম ছাড়েনি। মাত্র ৭৩৫ কেজি নমুনা ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালে ৬২৪ কেজি এবং ২০১২ সালে এক হাজার ৬০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। নদী দূষণ রোধসহ বিভিন্নমুখী পদক্ষেপে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হয়েছিল উল্লেখ করে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবারও হালদা নদী নিয়ে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা মৎস্য অধিদপ্তর প্রচুর কাজ করেছে। এর সুফল মেলার সম্ভাবনা থাকলেও সহনীয় মাত্রার ৩৬ গুণ বেশি লবণাক্ততা শেষতক পরিস্থিতিকে কোথায় নিয়ে ঠেকায় তা কেবল সময়ই বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৮ ঘণ্টার নিষ্ফল অপেক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধঅগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা