হালদায় মা মাছের আনাগোনা

বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের অপেক্ষা জোরেশোরে চলছে ডিম আহরণের সরঞ্জাম নৌকা-জাল মেরামত

হাটহাজারী প্রতিনিধি | বুধবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতি বছর বাংলা মাস চৈত্রের প্রথম দিক থেকে হালদায় মা মাছ আসতে শুরু করে। নদী সংযুক্ত খাল যথা মাতামুহুরী, সাঙ্গু, কর্ণফুলী, চেংখালী, পোরাকপালী, কাটাখালী, বোয়ালিয়া, সোনাই প্রভৃতি খাল ও নদীর খাড়িতে অবস্থানকারী মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়তে চলে আসে। ডিম ছাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে স্মরণাতীত কাল থেকে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়ে আসছে। বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পানি অপেক্ষাকৃত ঘোলাটে হলে নদীর কুম তথা পানির গভীরতা যেখানে বেশি, কিংবা নদীর কুমের পানির ঘূর্ণায়মান স্থানে মা মাছ ডিম ছেড়ে থাকে।

চৈত্র ছাড়াও পরবর্তী সময়ে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে বিশেষ করে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ হলে এবং নদীতে ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে চৈত্র মাসে নদীতে মা মাছের দেওয়া ডিম দ্রুত বর্ধনশীল। তাই এই ডিমের প্রতি পোনা ব্যবসায়ী ও মাছ চাষিদের আগ্রহ বেশি। যদি চৈত্র মাসে প্রবল বর্ষণ ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হয় এবং ডিম ছাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়া যায় তাহলে বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্যমাসে নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়ে থাকে।

কয়েকদিন ধরে আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। কয়েক দফা বৃষ্টিও হয়েছে এরই মধ্যে। তা দেখে ডিম আহরণকারীরা নৌকা, জাল ও ডিম আহরণের সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। হালদার দুই পাড়ে ডিম থেকে রেনু পোনা ফোটানোর সরকারিভাবে স্থাপিত হ্যাচারীগুলোর সংস্কার কাজও দ্রুত গতিতে করা হচ্ছে। তাছাড়া সনাতনী পদ্ধতির ডিম ফোটানোর মাটির কুয়াগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ডিম আহরণের প্রধান উপকরণ নৌকার মেরামত ও রং করার কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিম আহরণে সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন নদী, খাল ও ছড়া থেকে হালদা নদীতে মাছের আগমন অবাধ ও নিরাপদ করতে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মৎস্য বিভাগ ও নৌ পুলিশ সার্বক্ষণিক পাহারা ও অভিযান জোরদার করেছে। নদী থেকে মাছ চুরি প্রতিরোধ করতে নদীর পাড়ে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সিসি ক্যামেরা। এই ক্যামেরার মাধ্যমে উপজেলা, জেলা এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে নদী তদারকি করা হচ্ছে। নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার সময় যত ঘনিয়ে আসছে নৌ পুলিশের টহল ও প্রশাসনের তদারকি জোরদার করা হচ্ছে।

গড়দুয়ারা এলাকার ডিম আহরণকারী কামাল সওদাগর, মাদার্শা এলাকার আশু বড়ুয়া জানান, নদী থেকে ডিম আহরণের যাবতীয় প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, এক শ্রেণির কৃত্রিম রেনু পোনা ব্যবসায়ী এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা গত বছরের হালদার রেনু বলে কৃত্রিম রেনু পোনা বিক্রি শুরু শুরু করেছে। তাদের কারণে হালদা নদী থেকে আহরিত ডিমের রেনুর দীর্ঘদিনের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

জানা যায়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফ নদীর মাছ শিকার রোধ করতে দুই পাড়ে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছে। তাছাড়া মা মাছ শিকারিদের আটক করতে নদীতে সংস্থার পক্ষ থেকে সোলার চালিত বোট দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান ইউএনও মো. শাহিদুল আলম। এছাড়াও নদীতে মাছের অবাধ বিচরণ ও মজুদ বৃদ্ধি করে জীববৈচিত্র্য ও ডলফিন রক্ষা করতে সার্বক্ষণিকভাবে নদীর দুই পাড়ের জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ, আনসার ভিডিপি কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এবার পরিবেশ অনুকূল থাকলে হালদায় আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকুশে পদকপ্রাপ্ত দুই উপদেষ্টাকে সংবর্ধনা দিল বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা
পরবর্তী নিবন্ধআইরিশদের ২১৪ রানে আলআউট করেও অস্বস্তিতে বাংলাদেশ